:: সম্পা তালুকদার ::
সারা বিশ্ব যেখানে প্রকম্পিত, আমরা সেখানে হেয়ালি খেয়ালিতে মত্ত। ছোটবেলা থেকে শুনতাম হুজুগে বাঙালি। মানেটা ততটা বুঝতাম না সেসময়, এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এই যে হুজুগ তা ছেলেবুড়ো, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলের মাঝেই কমবেশি পরিলক্ষিত হয়। আসলে আমরা যে কী পর্যন্ত খামখেয়ালির বশে চলাফেরা করি তা করোনা আবারও নতুন করে প্রমাণ করলো।
আমাদের দেশের নামহীন বিশেষজ্ঞদের মতবাদ, “বাংলাদেশে করোনা আইত নায়।”
জানিনা এখন তারা কি বলবেন? আমাদের দেশের মানুষ ফ্রিতে ভ্যাকসিন পেয়ে ভ্যাকসিন নেয় না, তবে বাজারে যদি কোন পণ্যের মূল্য ছাড়ের সংবাদ পায়, সেখানে লোকের অভাব হয় না। এমন আজগুবি মানুষ আরও কোন দেশে আছে কিনা জানি না।
ভ্যাকসিন নিয়ে কোন লাভ নেই শুনে শুনে মাথা নষ্ট, আরে লাভ-লসের হিসাব কি জীবন-মরণের প্রশ্নেও আসে?
“জন্মিলে মরিতে হবে” একথা যেমন সত্য, তেমনি রোগ হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতে চলতে হবে, ওষুধ খেতে হবে। অন্যথায় কি পরিণতি হবে, তা সবারই জানা। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি, অথচ মাস্ক ব্যবহার করাটা কেউ কেউ মনে করেন প্রশাসনের কাছ থেকে বাঁচা। আরে আপনারা কি এখনও বুঝবেন না, নাকি বুঝতে চাইছেন না যে নিজের সুরক্ষার জন্য এবং দেশের মানুষকে সুস্থ রাখতে মাস্কের বিকল্প নেই।
আমরা বেশ ভালোই ছিলাম, উন্নত দেশগুলোতে যখন লেজেগোবরে পরিস্থিতি ছিল তখনও আমরা দিব্যি জম্পেশ সময় কাটিয়েছি। বাঙালি মানেই আবেগ-অনুভূতি থাকা চাই। আর এই অতি আবেগের পরিণতি কেমন হলো ভাবছেন কি একবার? প্রতিদিন আক্রান্ত ব্যক্তি আর মৃত্যুর খবর পেয়ে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। এতো এতো গুণীজন, এতো স্বজন হারানো ব্যথা কি আর সহ্য হয় বলুন? এখন যে কে কিভাবে আক্রান্ত হবে ভাবতেই পারবেন না। তবুও এখনও মানুষের তেমন কোন সচেতনতা দেখা যায়না। বুক ফুলিয়ে যারা বলতেন, আরে গ্রামে করোনা নাই, করোনা শহরে। এখন করোনা কোথায় তার কি খবর নিয়েছেন?
সারাদেশে এখন করোনা ছড়িয়ে গেছে, গ্রাস করেছে চারদিক। সাধারণ জনজীবনে নেমে এসেছে অভাব টানাপোড়েন। তাঁদের কেউ যদি ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয় তবে কি অবস্থা হবে বলুন, কিভাবে ওরা এতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা নেবে? আদৌ কি সম্ভব হবে চিকিৎসা নেওয়া? যেখানে সারাদেশে হাসপাতালগুলো ভর্তি এবং অক্সিজেন ও আইসোলেশনের অভাব, সেখানে সাধারণ মানুষ তো নীরবে মৃত্যুকে বরণ করা ছাড়া, আর কোন উপায় নাই। সবাইকে আরও আগে থেকে কঠোর অবস্থানে যাওয়া উচিত ছিল।
যা হবার হবে, এখনও নিজে সচেতন হোন, মাস্ক পরার বিকল্প নেই, হাত-পা ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জোরদার করা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, জনসমাগম থেকে বিরত থাকা এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্ত কাম্য। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার বিধান, যার যেদিন ডাক আসবে যেতো তো হবেই, কিন্তু অসময়ে চলে যাওয়াটা যে খুবই বেদনাদায়ক। কিছু কিছু অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে মন ভেঙে পড়ছে, এসব আর মানতে পারছিনা। রক্ষা করো প্রভু এ বিশ্বসংসার।