1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের কৃষিচিত্র

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

শহীদনূর আহমেদ ::
কৃষক বেলাল হোসেনের মুখে হাসির ঝিলিক। এবারের বোরো মৌসুমে ৭ খানি জমিতে বোরোধান চাষ করেছিলেন তিনি। ফলন ভালো হয়েছে। সপ্তাহ দিনের মধ্যে ধান কাটা, মাড়াই, শুকানোসহ সকল প্রক্রিয়া শেষ করে ধান গোলায় তুলে তিনি এখন নিশ্চিন্ত। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নিরাপদে গৃহস্থি সমাপ্ত করেছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাখিমারা হাওরপাড়ের এই কৃষক।
কৃষক বেলাল হোসেন জানান, এবার কৃষিকাজে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহারসহ উন্নত বীজ ও সার ব্যবহারের ফলে ফসল উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। দ্রুত সময়ে ফসল ঘরে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সরকারের দেয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন। একই সাথে ধানকাটা ও মাড়াই প্যাকেটজাত করায় খুব কম সময়ে অধিক জমির ফসল কেটে বেলালের মতো হাওর জেলা সুনামগঞ্জের হাজার হাজার কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত এই ডিজিটাল যন্ত্রটি। নিরাপদে বোরো ধান গোলায় তুলতে পারায় আনন্দের জোয়ার বইছে হাওর জনপদের কৃষক পরিবারে। এই আনন্দ আয়োজনের মূল কারিগর কৃষি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার। কৃষিতে ডিজিটাল পদ্ধতি ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যার পুরো কৃতিত্বের দাবিদার বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার।
সুনামগঞ্জ হাওর অধ্যুষিত জেলা। এ জেলায় ছোটবড় মিলে দেড় শতাধিক হাওর রয়েছে। এসব হাওরে যে ধান ফলে তা দিয়ে সারা বছরের খাদ্যের সংস্থানসহ উদ্বৃত ধান বাইরে রপ্তানি করা হয়। ১১ উপজেলার বেশিরভাগ স্থান নিম্নাঞ্চল হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমের বোরো ধানের আবাদই এ অঞ্চলের প্রধান খাদ্যের যোগান দেয়। হাওর অঞ্চলের কৃষির উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যবস্থায় বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ, কৃষককে প্রণোদনা প্রদানসহ ফসলের সুরক্ষায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে জেলার কৃষি সূচকে এসেছে নতুন সম্ভাবনা।
সুনামগঞ্জে এবার ১৩৭টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে। এই বোরো ধান থেকে প্রায় ৯ লক্ষ ১ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। জেলায় বছরে বোরো-আমন মিলে সর্বমোট ১১ লক্ষ ৫১ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। এ জেলার ২৯ লাখ মানুষের বাৎসরিক খাদ্যের চাহিদা ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন । এ বছর উৎপাদিত বোরো থেকেই ৪ লক্ষ ২১ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকবে। যা দেশের খাদ্য যোগানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে।
সুনামগঞ্জের কৃষিতে সাফল্যের পেছনে সরকারে গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে। উন্নতমানে বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ভতুর্কিমূল্যে ডিজিটাল কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান, ফসলের সুরক্ষায় বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করাসহ উৎপাদিত ফসল ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় নিশ্চিতে বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকা সরকার খুবই আন্তরিক। চলিত বোরো মৌসুমে কৃষকরা যাতে নিরাপদে আগাম বন্যার আগে দ্রুত সময়ে ধান কাটতে পারেন সেই জন্যে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ৭০% ভর্তুকিমূল্যে ১০৭ টি হারভেস্টর মেশিন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যার কারণে জেলার কৃষকরা নির্বিঘ্নে ধান কেটে গোলায় তুলতে পেরেছেন। এছাড়াও চাষাবাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি প্রদানসহ পানি সেচের সুব্যবস্থা নিশ্চিতে উৎপাদনে এসেছে সাফল্য।
তাই কৃষক বেলাল হোসেনের মতো লাখো কৃষক স্বপ্ন এঁকেছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনবেলা ডালভাত খেয়ে বেঁচে থাকার। পড়াশোনা করিয়ে মেয়েটাকে ভালো ঘরে বিয়ে দেয়ার। ছেলেটাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। তাঁর উৎপাদিত ফসল দিয়ে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখার। যা একদিন ছিল কল্পনার বাইরে।
২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবিতে তলিয়ে যায় জেলার সকল হাওরের ফসল। এর আগের বছরগুলোতে পরপর হাওর ডুবি মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল চাষীদের। ফসল রক্ষায় প্রাণপণ লড়ে যেতেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। মসজিদের মাইকের ঘোষণা শুনে উড়া-কোদাল নিয়ে ছুটতেন বাঁধ রক্ষায়। রাতদিন চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হতো না। এমন বছর ছিল না জেলার কোনো কোনো হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়নি। শ্রমিক সংকট আর প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি কৃষকদের। এ থেকে এখন পরিত্রাণ মিলেছে। কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী বোরো ফসলের সুরক্ষায় হাওরপাড়ে বাঁধ নির্মাণে সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। যা ছিল অকল্পনীয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পিআইসির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণে ১৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যা অতীত সময়ে কোনো সরকারই করতে পারেনি। দুর্যোগ ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস এখন মোবাইল ফোনে পাচ্ছেন কৃষকরা। সতর্ক হচ্ছেন, গ্রহণ করছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। কৃষি সেবা মিলছে হ্যান্ডফোন কিংবা স্মার্ট ফোনে। কৃষক অ্যাপসে মিলছে অসংখ্য পরিষেবা। কৃষক ও কৃষির জন্য সরকারের ডিজিটাল উদ্ভাবনী সুনামগঞ্জ তথা বাংলাদেশের কৃষিতে ঘটেছে বিপ্লব। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ এভাবেই এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com