1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পহেলা বৈশাখ ও সু-সাম্প্রদায়িক বাঙালি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

:: মোহাম্মদ আব্দুল হক ::
আমাদের ভাষা বাংলা, আমাদের দেশ বাংলাদেশ, আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশী, জাতি হিসেবে আমরা বাঙালি, আমাদের আজন্ম লালিত সংস্কৃতি হলো বাঙালি সংস্কৃতি। আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়, সাগরের ঢেউ, সবুজ মাঠ, দিগন্ত সবকিছুতেই শত শত উৎসব। প্রতিনিয়ত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের সকল ভাঁজে, আকাশে মেঘের সাথে, পাখির ডানায়, বাতাসে, ফড়িংয়ের দুরন্তপনায়, শিশুর খেলা আর মায়ের হাসিতে, কৃষকের কাজে এবং বাঙালি ছেলেমেয়ের চোখে থাকে শত রঙে রঙিন উৎসব। আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নানান ধর্মের সবমিলিয়েই আমরা বাঙালি। আমরা সুসাম্প্রদায়িক চরিত্রে ধর্মে থাকি। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে ছাড়িনা; তবে আমরা সারা দুনিয়ার সংস্কৃতিকেও ছাড়িনা। হ্যাঁ, আমরা এমন-ই। আমরা আমাদের মাঝে অন্য সকলকে আপন করে গ্রহণ করি এবং আমাদের উৎসবের গায়ে সময়ের নতুন কাপড় পরিয়ে দিই। তবে আমাদেরকে ভুলি না। আমরা বাঙালি, আমরা আর কেউ না। আমরা অপেক্ষায় থাকি এবং আমাদের একান্ত আপন ‘পহেলা বৈশাখ’ বাংলা সনকে বরণ করি।
হ্যাঁ, আমরা বাঙালি হলেও আমরা আন্তর্জাতিক আহ্বানকে অস্বীকার করে চলি না বা চলতে পারি না। তাই আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজের মাঝে শুধুই নিজেকে নিয়ে বসে থাকতে পারি না বা কেবল নিজেকে নিয়েই ভাবি না; বরং বিশ্ব মানুষের ভাবনায় মিলতে ও বিশ্ব সভায় চলতে বহুল প্রচলিত অনেক নিয়মের মাঝে আমরা ইংলিশ ক্যালেন্ডারকে মেনে চলি। এটা আপাতত মানতেই হচ্ছে, যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতি, বিশ্ব রাজনীতি, বিশ্ব মানের শিক্ষা, বিশ্ব স্বাস্থ্য এবং বিশ্ব শান্তির পথে এখন এটি-ই অধিক অনুসরণীয়। আমরা এর বাইরে এখনই চলতে সমর্থ হইনি। তাই সবসময় ইংরেজি বর্ষে চললেও, অবর্ণনীয় এক মায়ার টান আমাদের থেকেই যায় আমাদের পহেলা বৈশাখ ঘিরে। দেখুন বাংলার মাটির জমিন গড়িয়ে গড়িয়ে যে জল নিরবধি ছুটে চলেছে খাল, বিল, হাওর, নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে তাতে অন্য কোনো স্বাদ নাই; বরং বাংলার মাটির গন্ধ পাই। এই মাটির সন্তান পাহাড়, সমতল মিলিয়ে বাংলার প্রতি স্তরে নানান অঞ্চলে কতো উৎসব যে পালন করে তার হিসেব করলে তালিকা দীর্ঘ হবে। ওই-সব উৎসবের লালন-পালন-ই বাঙালির উৎসব। এরমধ্যে কিছু উৎসব আছে যা সবাই মিলে একসাথে একদিনে উদযাপন করি, তেমনি এক উৎসব হলো বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ। আমাদের চির আরাধনার ‘পহেলা বৈশাখ’ বাংলা সালের প্রথম দিনে প্রথম সূর্য উদিত হলে যে চমৎকার উৎসব হয়, যেখানে বাংলার শিশু, নারী, পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ সকলে অংশগ্রহণ করে, সেখানে সবকিছুই বাংলাময় হয়ে ওঠে। মাঠে, নদী তীরে, সড়কে কবিতা উচ্চারিত হয় মুখে মুখে। সকলেই কবি হয়ে ওঠে আর করে উচ্চারণ :
“বাংলাদেশের হাজার পাখি ওই যে শোনো ডাকে / বাংলাদেশের প্রথম প্রহর প্রথম আলোর বাঁকে।/ প্রথম প্রহর প্রথম আলো /প্রথম প্রহর প্রথম আলো / নতুন আলোর নতুন ভোরে এসেছে নতুন বর্ষ / এসো দেখো আলোর সাথে আকাশ মাটির স্পর্শ / আজ বাঙালির পহেলা বৈশাখ শুভ শুভ নববর্ষ।”
বৈশাখে বাংলাদেশে নতুন ধান হয়। গ্রামের ঘরে ঘরে নতুন ধানের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে। কৃষাণ-কৃষাণির মন ভরে যায় নতুন ধানের গন্ধে। কারো ঘরে অভাব থাকেনা। আমাদের দেশ কৃষি-প্রধান বাংলাদেশ। ভালো ফসল উৎপাদন হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এই ফসল উৎপাদনের সময়কে কেন্দ্র করেই বহু বছর আগে বর্ষপঞ্জি সংস্কার করে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। আর কালক্রমে এভাবেই এখন চলছে বৈশাখ থেকে চৈত্র বারো মাস হিসেবে বাংলা বর্ষ। এই বৈশাখী ফসলের আগমনে শহুরে জীবনেও এর প্রভাব পড়ে। তাই আমাদের বাংলা নববর্ষে বাঙালি মন সাজে নতুন সাজে। ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের মাঠ সাজে নতুন সাজে। খাদ্যে ওইদিন যোগ হয় পান্তা ভাত যা বাঙালির অতি পরিচিত ও প্রাচীন খাদ্য। এখানে সুবিধা মতো পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ কিংবা অন্য কোনো মাছ ভাজা মিশিয়ে খেয়ে বাঙালি নতুন বছরকে স্মরণ করে। সুন্দর রূপের বিপরীতে সব ‘অপ’+রূপ (এখানে অপরূপ নেতিবাচক অর্থ প্রকাশক ) ওইদিন সরে যায় দূরে দূরে। বাংলার গ্রাম ও শহরে ভিন্ন ভিন্ন সাজ দেখা গেলেও ওইদিন মন ও মননে আমরা সবাই বাঙালি এক জাতি একে অন্যের পরম আত্মীয় হয়ে উদ্ভাসিত হই। সারা বছর নানান কাজে ব্যস্ত থাকলেও এইদিন আমরা মিলে যাই। এই দিনটিকে উৎসবে উদযাপন করার জন্যে সরকারি সাধারণ ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সত্যি বলতে; বাংলা নববর্ষকে বরণ করার জন্যে আমরা বাঙালি সকল ধর্মের মানুষ সু-সাম্প্রদায়িক চেতনায় জেগে উঠি। পহেলা বৈশাখ হলো একান্ত আমাদের সংস্কৃতি। এখানে আমরা সকল বাঙালি পর¯পরকে চিনি নিবিড় বন্ধনে। এখানে প্রকৃতি সবার জন্যে সমান সাজে। এখানে সবার কণ্ঠে গান হয় বাংলা বর্ষের প্রথম মাসকে স্মরণ করে। গানে বৈশাখের চরিত্র ফুটে ওঠে।
বাঙালির কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় : ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ আমাদের বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, ‘ এসো হে বৈশাখ এসো এসো।’ এখন এখানে তরুণ-তরুণী গেয়ে ওঠে, ‘এলো বৈশাখ বৈশাখ…’। এভাবেই সারা বাংলায় নববর্ষ উদযাপিত হয়।
আমরা বাঙালি আবার আমরা বিশ্ব নাগরিক। আমরা বাংলাকে ভালোবাসি আবার বিশ্বের দরবারে মিশি প্রয়োজনীয় কথা ও পোশাক পরে। পহেলা বৈশাখ যেমন প্রত্যাশার, তেমনি বৈশাখ ঘনিয়ে এলে কালবৈশাখী আতঙ্ক বাংলার মানুষের মনে ভয় জাগায়। মূলত: বৈশাখ মাসের ক্ষ্যাপা বিদ্রোহী ঝড়ের কারণে বৈশাখ মাসের ওই ঝড়কে কালবৈশাখী নামে ডাকা হয়। এমন ঝড় বাংলা সনের প্রথম মাসের চরিত্রের সাথে মিশে আছে যুগ যুগ ধরে। আমাদের এ অঞ্চলে শীতের বিদায়ের পর ফালগুনের বাতাসের পথ ধরে চৈত্রের শেষে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে সারা বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব ভারতজুড়ে যে ঝড় বয়ে যায় তা-ই কালবৈশাখী। বাংলা বর্ষের শুরুতে বৈশাখ মাসে এ ঝড় তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি হয় বলেই এটি কালবৈশাখী নামে সবার কাছে পরিচিত। হ্যাঁ, বৈশাখের ভয়ংকর এক চরিত্র হলো ঝড়-তুফান। আমরা একটু আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করি। গ্রামের কাঁচা বা আধা-পাকা ঘর মেরামত করতে হয়। শহরে বৈদ্যুতিক খুঁটি ঠিক আছে কি-না দেখতে হয়। কারণ, ঝড়ের তাণ্ডবে গরুর ঘর, গাছ-পালা, ঘরের টিন, বৈদ্যুতিক তার, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি ভেঙে কিংবা হেলে পড়তে পারে। পাকা বাড়ির কাঁচের জানালাও রক্ষা পায়না বজ্রঝড়ের প্রচণ্ডতার হাত থেকে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে এবং মানুষ, পশু ও অনেক কিছুর মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই ব্যক্তিগত ভাবে এবং স্থানীয় পরিষদের দায়িত্বে আগে থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। হ্যাঁ, আমরা ভুলিনা। বাংলার কবিতা ও গান আমাদেরকে সজাগ রাখে : “ভয়ংকরের রূপ সাজে ওই কালবৈশাখী হাঁকে / বাংলাদেশের প্রথম প্রহর প্রথম আলোর বাঁকে।।”
শুভ নববর্ষ। সবার প্রতি ভালোবাসা।
[লেখক : কলামিস্ট, কবি ও প্রাবন্ধিক]

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com