দেশে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমে অবস্থার অবনতি ঘটছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনও স্বাস্থ্যসচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এদিকে আবার বোরো ধান কাটার মৌসুম এগিয়ে আসছে এবং আমাদের মনে হয় করোনা প্রতিরোধের কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি এই বোরো ধান ঘরে তোলা ও ধানবিক্রয়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে ফড়িয়াবাণিজ্যের উদ্ভবকে প্রতিরোধ করার বিষয়টির দিকেও গুরুত্ব সহকারে নজর দেওয়া উচিত।
প্রতি বছর কৃষকের বোরো ধান ন্যায্যমূল্যে বা উচিতমূল্যে ক্রয়ের জন্যে সরকার ব্যবস্থা করেন এবং শেষ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাকেই অবলম্বন করে ফড়িয়াব্যবসায়ীদের মুনাফা অর্জনের বিভিন্ন করণকৌশলের উদ্ভব ঘটে এবং এইসব করণকৌশলের ফাঁদে পড়ে কৃষকের আর ন্যায্যমূল্য পাওয়া হয় না কিন্তু ফড়িয়াব্যবসায়ীদের লাভ ঠিকই নিশ্চিত হয়। বোধ করি এই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে এবার গোলায় ধান উঠানোর শুরুতে ধান ক্রয়বিক্রয় নিয়ে ফড়িয়াবাণিজ্যের বাড়াবাড়ি অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি সুনামগঞ্জ জেলা শাখা গত রোববার (১১ এপ্রিল ২০২১) সকালে জেলা প্রশাসকের বরাবরে ৫ দফা দাবির একটি স্মারকলিপি পেশ করেছে। সোমবারের (১২ এপ্রিল ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠে এ সংক্রান্ত সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বৈশাখের শুরু থেকে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের দাবি’। সংবাদ বিবরণী থেকে জানা যায়, কৃষক সংগ্রাম সমিতি দাবি করেছে, বোরো ধান ক্রয়ের বিষয়ে এবার সর্বাগ্রে সরকারের পক্ষ থেকে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র চালু করে কৃষকের নিকট থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় করার ব্যবস্থার সঙ্গে উৎপাদন উপকরণের দাম কমানো, উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তাছাড়া ভূমিহীন কৃষকে জমি প্রদান ও তার কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং কৃষককে কৃষি কার্ড দেওয়াসহ সরকারি খাদ্য গুদামে হয়রানি ও ওজনে কম দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। পরিশেষে দাবি জানানো হয়েছে, ভূমিহীন কৃষককের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
এই সব ‘করতে হবে’র ভেতরে জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা লুকিয়ে আছে। আর সেটি হলো, কৃষকরা দেশের খাদ্যনিরাপত্তা সৃষ্টির কারিগর, তাদের দাবির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করা তাই মোটেও সঙ্গত নয়। কৃষককে বঞ্চিত করে দেশের উন্নতি হবে, সেটা আশা করা যুক্তিযুক্ত তো নয়ই, বাতুলতা মাত্র। সুতরাং কৃষককে তার ধানের ন্যায্যমূল্য পাইয়ে দেওয়া হবে তার উন্নতির প্রথম সোপান তৈরিতে হাত লাগানো, অর্থাৎ সর্বাগ্রে ‘সরকারের পক্ষ থেকে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র চালু করে কৃষকের নিকট থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় করার ব্যবস্থা করা’।