গত সোমবার (২৩ মার্চ ২০২১) সুনামগঞ্জ সদরে আসন্ন রমজানে সবেতনে ছুটি ও চাল-ডাল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়ে গেছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পুরাতন বাসস্টেন্ড থেকে শুরু করে আলফাত চত্বরে (ট্রাফিক পয়েন্ট) এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তাদের বক্তব্য পেশ করে। এই বিক্ষোভ কর্মসূচির উদ্যোক্তা ‘সুনামগঞ্জ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন’। এই কর্মসূচিটি দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে বাস্তবত এবং তর্কাতীত অর্থে একটি অকৃত্রিম বিক্ষোভ মিছিল। কারও কারও কাছে সেটিকে নিতান্ত ক্ষুদ্র মনে হতে পারে। কিন্তু এই মিছিলের সঙ্গে সমগ্র বাংলাদেশের সুবিশাল পরিসর পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল সংখ্যক শ্রমিককে যোগ করে ভাবলে বিষয়টা আর ক্ষুদ্র মনে হবে না। এই মিছিলের সঙ্গে শ্রমিক যাঁরা জড়িত তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের কাজের বেতন থেকে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে সংসার চালান। তাঁদের কারও আয়ের কোনও স্থিতি, যার গালভরা নাম ‘ব্যাংক ব্যালেন্স’ নেই। যে-ব্যাংক ব্যালেন্স থাকলে, তা থেকে প্রতিদিনের অনিবার্য আবশ্যকীয় ব্যয় মিটিয়ে, এক মাস বিনাবেতনে কাজের ছুটি ভোগ করতে পারবেন। এদিকে রমজানের সময় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বেকারির মালিকরা বিনাবেতনে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদেরকে ছুটি প্রদান করতে যাচ্ছেন। ফলে শ্রমিকরা বিনাবেতনে ছুটি কাটানোর এক মাস কী করে খাওয়া-পরার ব্যয় নির্বাহ করবেন, সমাধানহীন সে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এইভাবে একটি বিশেষ শ্রমিক শ্রেণির, তাঁরা সংখ্যায় যতোই ক্ষুদ্র হোন না কেন, বাঁচার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার অধিকার কারও নেই এবং এমন অধিকার সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার বা কোনও প্রতিষ্ঠানের থাকাটা সার্বিক বিবেচনায় আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদি বিনাবেতনে ছুটি কার্যকর করা হয়, তবে প্রমাণিত হবে যে, এই সমাজ-রাষ্ট্র-সরকার সংশ্লিষ্ট শ্রমিক শ্রেণিকে না-নাগরিকের পর্যায়ে রেখে দিয়েছে, যা কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। রমজানের (পুরো এক মাস) প্রেক্ষিতে বিনাবেতনে ছুটি কাটানোর সময়টাতে বিপন্ন হয়ে পড়া শ্রমিকদের জীবনের সমস্যা নিরসনে সরকার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিবেকবান মানুষেরাও এই সমস্যাটি নিরসনের জন্যে এগিয়ে আসতে পারেন।