গত রোববার (১৪ মার্চ ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠে ‘জোরপূর্বক ৫ তরুণের চুল-দাড়ি কর্তন’-এর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তরুণেরা ‘বাজারের সেলুনে স্টাইল করে চুল ও দাড়ি কাটছিলেন’, তখন ফুল মিয়া নামের একজনের পছন্দ হচ্ছিল না, বিষয়টি নিয়ে তরুণদের লক্ষ্য করে তিনি ‘কটূক্তি’ করেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে কথা কাটাকাটির জের ধরে ফুল মিয়ার পক্ষাবলম্বন করে কতিপয় লোক এই পঞ্চতরুণের চুল-দাড়ি একেবারে মুড়িয়ে দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেন। থানায় অভিযোগ দায়ের হলে জোরপূর্বক মাথা ন্যাড়াকারী তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এখন বিদগ্ধ মহলের প্রশ্ন হলো, এই দুই কর্ম অর্থাৎ স্টাইল করে চুল-দাড়ি কাটা ও স্টাইল করে চুল-দাড়ি কাটার কারণে জোরপূর্বক মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া, কোনটি দোষের? স্টাইল করে চুল-দাড়ি কাটাকে যদি দোষের ধরা হয়, তবে এই ‘ফুল মিয়া’দের উচিত সকল স্টাইলিস্ট তরুণীকে ধরে জোরপূর্বক ন্যাড়া করে দেওয়া। এ ব্যাপারে আর বিস্তৃত বয়ার্ণনার কষ্ট স্বীকার করতে যাচ্ছি না। বক্তব্যটি একটু ঘুরিয়ে আরও গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা যাক।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, এইসব ‘ফুল মিয়া’রা পথেঘাটে ফুঁ দিয়ে বেড়ান, নিজগাত্রে দোষের সবকীছুর ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলেন। কিন্তু জোরপূর্বক কারও মাতা মুড়িয়ে দেওয়া যে ‘স্টাইল করে চুল-দাড়ি কাটার’র চেয়ে ভয়ঙ্কর দোষের একটি কাজ তা বুঝেও না বুঝার ভান করেন এবং প্রতিনিয়ত কোনও না কোনও একটি দোষের কাজ করে অপরকে উত্ত্যক্ত করতে পছন্দ করেন। বিদগ্ধ মহল মনে করেন, এইসব লোকেরা যদি সত্যিকার অর্থেই সমাজের উপকারার্থে বা মঙ্গলাকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে যত্রতত্র উত্তেজিত হয়ে উঠতেন তবে সমাজের কতই না মঙ্গল সাধিত হতো, তা আর কর্তব্য নয়।
‘স্টাইল করে চুল-দাড়ি কাটা’ কারও কোনও ক্ষতি করছে না, সমাজের কোনও নৈতিক অধঃপতনকেও কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে না, কিন্তু ঘুষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, উদ্বৃত্তমূল্য, অপহরণ, হঠাৎ বড় লোক হওয়া, সন্ত্রাসী হওয়া, চোর-বাটপারি, রাজাকারিতা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ভূমিদখল, ধর্ষণ কিংবা যে-কোনও অসামাজিক ও অনৈতিক কাজ করা ইত্যাদি মন্দ কাজের ব্যাপক সংঘটনে প্রতিনিয়ত মানুষ কেবল নিগৃহীতই হচ্ছেন না, এমনকি অকালে খুন পর্যন্ত হচ্ছেন। এইসব ‘ফুল মিয়া’রা নিজেরা এইসব কাজ করে বেড়াচ্ছেন অথবা দেখেও না দেখার ভান করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে আমরা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করছি। রবীন্দ্রনাথ, অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহে, উভয়কেই সমানভাবে দোষী সাব্যস্থ করেছেন। রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করার সঙ্গে স্মরণ করছি সাধারণ মানুষকে, আপনারা সাধারণ মানুষেরা সচেতন হোন, জীবনের বাস্তবতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। এইসব অসামাজিক ও অনৈতিক লোকেরাÑ যাদেরকে বলা হয় ঘুষখোর, সুদখোর, উদ্বৃত্তমূল্য অপহারক, হঠাৎ হওয়া বড় লোক, হাওররক্ষা বাঁধের বরাদ্দ লুটেরা, চোরাচালানী, অর্থপাচারকারী, মাদকব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, নিপীড়ক, চোর-বাটপার, রাজাকার, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, ভূমিখোর, ধর্ষকÑ তারা আপনার চারপাশে বাস করে, তাদেরকে বর্জন করুন, ঘৃণা করতে শিখুন।