স্টাফ রিপোর্টার ::
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুনামগঞ্জে আবারও জলমহাল দখল নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলেই খুন হয়েছেন জয়নুদ্দিন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া আটটায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শিমুলবাক ইউনিয়নের তেরহাল গ্রামে এ নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে। উল্লেখ্য এর আগে গত ৭ জানুয়ারি ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহাল দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শ্যামাচরণ বর্মণ নামের এক মৎস্যজীবী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছিলেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তেরহাল হাওরের দামাইল জলমহাল নিয়ে আদর্শ সমবায় সমিতি ও তেরহাল মৎস্যজীবী সমিতির লোকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে হাঙ্গামার পাশাপাশি সালিশ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জলমহালটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা এনে ভোগদখল করছিল তেরহাল আদর্শ সমবায় সমিতি। কিন্তু একই গ্রামের তেরহাল মৎস্যজীবী সমিতির লোকজন ইজারা না পেয়ে বিরোধে জড়ায়। তারা বিভাগীয় কমিশনার ও ভূমি আপিল বোর্ডে অভিযোগ দায়ের করে। এ নিয়ে এলাকায়ও প্রায় দুই মাস আগে সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে লিখিতভাবে পঞ্চায়েতনামা মেনে নিয়ে সরে যায় তেরহাল মৎস্যজীবী সমিতি। বৃহস্পতিবার ভোররাতে তেরহাল মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আলতাব আলী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আদর্শ সমবায় সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমদের নির্মিত খলাঘরে আক্রমণ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে নিহতের ছেলে ইকবাল হোসেন, মিজানুর রহমানসহ মোশারফ মিয়া, লিটন মিয়া, নাজির আহমদ, জুয়েল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের সকালে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে ভোররাতে এই সংঘর্ষের জের ধরে সকাল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। সকালে জলমহালের ইজারাদার মৎস্যজীবী সংগঠন আদর্শ সমবায় সমিতির সদস্য ইকবাল হোসেনের বাবা জয়নুদ্দিন নোয়াখালি বাজারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আসছিলেন। এসময় পথে তাকে একা পেয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরাও সংঘর্ষে জড়ান। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ১০ জনকে আটক করে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নিহতের ফুফাতো ভাই জাকির মিয়া বলেন, আমার ভাতিজা বিলের ইজারাপ্রাপ্ত সংগঠনের সদস্য। রাতে তার উপর হামলা হয়েছিল। সকালে তার বাবা বাজারে আসার পথে রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে আলতাব আলী ও সালামের লোকজন। আমরা এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে আলতাব আলী ও আব্দুস সালামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা কেউ কল রিসিভ করেননি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি কাজী মোক্তাদীর হোসেন বলেন, জলমহাল দখলের বিরোধের জের ধরে একজন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ১০জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।