স্টাফ রিপোর্টার ::
দিরাইয়ে উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়ছে কালনী নদীর উপর নবনির্মিত ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়কের গার্ডওয়াল। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কাজের মান নিয়ে শুরুর দিকে প্রশ্ন থাকলেও এখনো কাজ বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রকৌশলী।
জানাযায়, দিরাই উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০১৩ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১০ মিটার দৈর্ঘ্যরে কালনী ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজের উভয়পাশে গার্ডওয়াল দিয়ে তিনশ ৭৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসময় কাজ পায় মেসার্স নূরুল ইসলাম নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুরুতেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সংযোগ সড়কের দিরাই উপজেলা সদর পাড় অংশ আকারে একদিকে ১৩৩ ও অন্যদিকে ১০০ মিটার সংযোগ সড়কের উভয় পাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি ভরাট করে এইচবিবি (ইটসলিং) করা হয়। এতে পাড়ের উপজেলা রোডমুখি সংযোগ সড়কের পূর্বদিকের গার্ডওয়ালটি প্রায় দেড় ফুট হেলে গিয়ে ধনুক আকার ধারণ করেছে। বাজারমুখি সংযোগ সড়কের পশ্চিম দিকও অনেকটা হেলে গেছে। সংযোগ সড়কটি হেলে পড়ায় এলাকাবাসীর আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়। পরে ঠিকাদারের মাধ্যমে সংযোগ সড়কের মাটি খুঁড়ে রড দ্বারা একপাশের গার্ডওয়ালের সঙ্গে অন্যপাশের গার্ডওয়াল টানা দিয়ে ওয়ালটি রক্ষার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ব্রিজের অপর পাড়ে ৬০ মিটার গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হলেও সেখানে নাম মাত্র মাটি ভরাট করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজ সম্পাদনের পত্র প্রেরণ করা হলেও দাপ্তরিকভাবে তা গ্রহণ করা হয়নি।
অ্যাপ্রোচ সড়ক অকেজো হয়ে পড়ায় ঝুঁকি থাকায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কালনী ব্রিজটি ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কালনী নদীতে দুইভাগে বিভক্ত দিরাই উপজেলাকে একত্রীকরণের স্বপ্নের যোগাযোগও হুমকিতে পড়েছে। ব্রিজের পশ্চিম পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়কের একপাশের দুইদিকে গার্ডওয়াল হেলে পড়ছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও কাজে অনিয়মের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
দিরাই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মির্জা ইসলাম মান্না বলেন, এ ব্রিজ নির্মাণের শুরু থকি নিম্নমানের কাজ করিয়া আইরো। সংযোগ সড়কের দুইদিকেই দোকান ঘরসহ বাসাবাড়ি আছে এখন গার্ডওয়ালটি হেলে পড়ায় আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে। প্রশাসন যদি লক্ষ রাখতো তাইলে এমন হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিনুর ইসলাম বলেন, কালনী নদী পাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গার্ডওয়াল উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়ায় আমরা হতাশ।
মেসার্স নূরুল ইসলাম নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নূরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, ২০ মিটার টপ সাইডের ৬ ইঞ্চি হেলে গিয়েছিল এখন সেটি ঠিক করা হয়ছে। আরও কাজ করা বাকি রয়েছে। জেলা থেকে ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শন করে গেছেন। তেমন কোনও সমস্যা হবে না।
দিরাই উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, এ কাজের রিভাইস ডিজাইন চলছে। এ ব্যাপারে আরও ভাল বলতে পারবেন সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি’র) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, হ্যাঁ এই ব্রিজের অ্যাপ্রোচের ব্যাপারে জানি। এটি গত বছরের কাজ। কাজ চলমান আছে।