শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামীণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ। পিরানহা মাছকে ‘সামুদ্রিক চান্দা’ বলে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারে অন্য মাছের তুলনায় দামে কিছুটা কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ এই মাছ কিনছেন। কিন্তু ক্রেতারা জানেন না, মানবদেহের জন্য কতটা ক্ষতিকারক এ মাছ। তাই গ্রামীণ বাজার ও পাড়া মহল্লায় আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্দ্বিধায় অনেকেই কিনছেন এসব মাছ। এতে ভোক্তারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, একইসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে।
শুক্রবার সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সদরগড় গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিছু এক ব্যবসায়ীকে পিরানহা মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার ও মহল্লায় এই ক্ষতিকারক মাছ বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে বলে জানাগেছে।
সদরগড় গ্রামের উজ্জ্বল চন্দ বলেন, শুক্রবার জয়নাল নামে এক ব্যবসায়ী আমার মায়ের কাছে পিরানহা মাছ বিক্রি করেছেন। রূপচাঁদার নাম করে এই মাছ বিক্রি করছেন এই ব্যবসায়ী। মাছের দাঁত মানুষের মতো। শক্ত এই মাছগুলোর চোয়াল ভয়ংকর। আমি এই মাছ রান্না করতে নিষেধ করেছি। সদরগড়সহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এই মাছ অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জলজ পরিবেশের সঙ্গে পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এগুলো রাক্ষুসে স্বভাবের, অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ তথা জীববৈচিত্র্যের জন্য এগুলো নিশ্চিতভাবেই হুমকিস্বরূপ। এ কারণে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি ও ২০১৪ সালের জুন থেকে সরকার ও মৎস্য অধিদফতর আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ, বংশ বৃদ্ধিকরণ, বাজারে ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এ অবস্থায় নিষিদ্ধ পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ ক্রয়-বিক্রয় নিরুৎসাহিত করতে দরকার হাটবাজারে, গণমাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা করা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নিষিদ্ধ মাছ চাষ, বিক্রি ও সংরক্ষণ করছে,তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সচেতনমহল।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। কোথাও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তারা বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাছাড়া আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ বিক্রি বন্ধে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।