জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষ্যে উঠে এসেছে লুটপাটের নগ্ন বিবরণচিত্র, তিনি বলেছেন, ‘নিজের বাড়ির সামনে অপ্রয়োজনীয় সড়ক নির্মাণ বা প্রশস্ত করার মানসিকতা বাদ দিতে হবে।’ অপরদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, ‘জনগণের এক টাকাও যদি সাশ্রয় করতে পারি এটা বড় পাওয়া’। দেশ পরিচালনা ও দেশ গঠন-পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালনে নিরত এই দু’জন মানুষের এমন উচ্চারণ সত্যিকার অর্থেই আশার সঞ্চার করে সাধারণ মানুষের মনে।
প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী দু’জনের ভাষ্যই ইতিবাচক বার্তা পরিবেশিত করে জনগণের জন্যে এবং সেই সঙ্গে তাঁদের ভাষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির মানুষের লুটপাট করে টাকার কুমিরে পরিণত হওয়ার প্রবণতার প্রসঙ্গটি যেমন উঠে এসেছে তেমনি এই লুটপাটকে প্রতিহত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর প্রসঙ্গটিও বাদ যায় নি। দেশের মানুষের জন্য এমন ইতিবাচক বার্তার ভেতরে আর একটি ভয়াবহ বার্তা পরিবেশিত হয়েছে। আর সেটি হলো, অতীতের একনেক প্রকল্পকে কেন্দ্র করে লুটেরাদের লুটপাটের মচ্ছবের ব্যাপারে কোনও না কোনও রহস্যজনক কারণে উদাসীন ছিল। এই উদাসীনতার সুবাদে, অতীতে বিএনপির শাসনামলের একসময়, লুটেরা-দুর্নীতিবাজরা এতোটাই প্রশ্রয় পেয়েছিল যে, তৎকালের বাংলাদেশ সগৌরবে পাঁচ পাঁচ বার বিশ্বের দরবারে সেরা দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করতে পেরেছিল।
অভিজ্ঞ মহলের ধারণা দেশ এখনও লুটপাটের অর্থনীতির নিচে চাপা পড়ে চিড়ে চেপ্টা অবস্থায় আছে। তা না হলে গণমাধ্যমান্তরে ১. দেশে খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা, ২. প্রকল্পে অস্বাভাবিক বাজারমূল্য অধিকতর সচেতনতার নির্দেশ, ৩. ব্যাংকিং খাত সংস্কারে টিআইবির ১০ সুপারিশ, ৫. মালেকের সম্পদের খোঁজে গোয়েন্দারা, ৬. কারা ডিআইজির সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ ইত্যাদির মতো সংবাদ পরিবেশিত হবে কেন, যে-সংবাদগুলো অবাধ ও বেপরোয়া লুটপাট চলছেই-এর ইঙ্গিতবাহী? তবে আশার কথা এই যে, এইসব সংবাদের মধ্যেই দুর্নীতিকে প্রতিহত করার দুর্বার চেষ্টা প্রতিনিয়ত জোরদার হচ্ছে সে-বিষয়টাও দুর্লক্ষ্য নয় এবং দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর শুভ প্রচেষ্টাটি শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আমলে। এখানে উল্লেখ্য যে, দুর্নীতি জাতীয়নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর।
পরিশেষে বলি, দেশের মানুষের একান্ত এই যে, দুর্নীতিকে প্রতিহত করার দুর্বার চেষ্টা প্রতিনিয়ত জোরদার হোক। ভুলে গেলে চলবে না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশ জিততে না পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন দিবাস্বপ্নে পর্যবশিত হবে।