ধর্মপাশা প্রতিনিধি ::
যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়ায় ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে চারজন সহকারী শিক্ষককে শিক্ষক হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত ও তাঁদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল মিয়া।
গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ওই চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে যথাসময়ে উপস্থিত না থাকার বিষয়টির সত্যতা পান। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় ওই চারজন সহকারী শিক্ষককে অনুপস্থিত দেওয়া হয়। এছাড়া কর্মস্থলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপস্থিত না হওয়ায় গতকাল বুধবার সকালে ওই চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৯০জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এবং সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে দুজন শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা বেশ কিছুদিন ধরে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হন না। আবার ছুটি হওয়ার আগেই নানা কারণ দেখিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে মৌখিকভাবে এমন অভিযোগ পেয়ে গত মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল মিয়া ও সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিজয় সরকার। সকাল ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে তাঁরা অবস্থান করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খন্দকার মোকাররম হোসেন ও সহকারী শিক্ষক শাহীনূর আলমকে উপস্থিত দেখতে পান তাঁরা। অন্য চারজন সহকারী শিক্ষক শাহ সেলিনা, তাসলিমা সুলতানা, লতিফা আক্তার ও আবিদা সুলতানাকে অনুপস্থিত দেখতে পান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় ওই চারজন শিক্ষককে অনুপস্থিত দেখিয়ে স্বাক্ষর করেন।
অনুপস্থিত থাকা ওই বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক বলেন, আমরা নোটিশ পেয়েছি। আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে আসতে পারিনি। কিছু সময় পর স্কুলে এসেছি। আমাদের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত। তবে ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না।
সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খন্দকার মোকাররম হোসেন বলেন, নানা কারণে এই চারজন শিক্ষক যথাসময়ে বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হতে পারেননি বলে আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া ও বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ না করার বিষয়টি নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেও কোনো সুফল পাইনি। এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল আউয়াল মিয়া বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে চারজন শিক্ষকই ওইদিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হননি। তাই ওই চারজন শিক্ষককে অনুপস্থিত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বুধবার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে জবাব না পেলে এই চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।