1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভালোবাসার দিনে রঙিন শিমুল বাগান

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

শামস শামীম ::
পত্রপল্লবহীন গাছগুলো। থোকায় থোকায় ফুটে আছে লাল ফুল। বিস্তৃত বাগানজুড়ে যেন রঙের আগুন। প্রকৃতির সেই বিনাশহীন আগুনে বিশেষ দিনে অবগাহন করছেন হাজারো দর্শনার্থী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে তারা পয়লা ফাগুনে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে গেয়েছেন বসন্তের গান। কেউ প্রেয়সীর হাত ধরে ছুটোছুটি করেছেন। কেউবা বন্ধু বা সপরিবারে মধুর সময় কাটিয়ে ফিরেছেন বাড়ি। শুক্রবার দিনভর জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল দেখার মতো। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বসন্তদিনে শিমুল বাগানে রঙিন ফুলের বাগানে ঘুরে গেছেন তারা।
ঘনসবুজে পাহাড়, স্বচ্ছতোয়া জলের ঝলমলে নদী যাদুকাটা, মরুময় বিস্তীর্ণ বালুপ্রান্তর ঘেরা প্রকৃতিসুন্দর তাহিরপুরের অনন্য এমন স্থানে অবস্থিত তাহিরপুরের জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান। তাহিরপুরের সীমান্তগ্রাম মানিগাঁওয়ে দুই দশক আগে ২ হাজার বৃক্ষ সম্বলিত শিমুল বাগানটি এখন দেশ-বিদেশের সৌন্দর্য্য পিয়াসী মানুষের বিশেষ পছন্দ আকর্ষণের অন্যতম পছন্দের স্থান। কর্তৃপক্ষের মতে দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান এটি।
প্রতি বছর ফুল ফোটার এমন সময়ে বিশেষ করে ভালোবাসার এই দিনে দলে দলে এসে লাল শিমুলের রঙে মন রাঙান প্রকৃতি প্রেমিক মানুষেরা। ভালোবাসার বসন্তদিনে পুরো শিমুল বাগানই ছিল ভালোবাসাময়। শিমুল বাগানের সারি সারি গোলাকার গাছ, চিকন ডাল, ন্যাড়া মাথায় ঝুলে থাকা লাল ফুলগুলো এখন এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে রেখেছে বাগানে। ‘অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে’ বলে অনেককেই আবেগে মাততে দেখা যাচ্ছে। বিষণ্ন মানুষও শিমুলের রঙে উজ্জ্বল করছেন দেহমন। ফাগুন হাওয়ায় ফুলের সঙ্গে তারাও নেচেছেন, গেয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই শিমুল বাগান তৈরির মানুষটি ছিলেন বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান সোহালা গ্রামের হাজী জয়নাল আবেদীন। এই বৃক্ষপ্রেমি এলাকায় স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় লক্ষাধিক হিজল-করচের গাছও লাগিয়েছিলেন। এলাকার বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাগুলোকেও বৃক্ষে বৃক্ষে সবুজের তোরণ করেছিলেন। বিভিন্ন স্থানে সারি সারি এসব বৃক্ষরাজি এখন তার স্মৃতির স্মারক হয়ে মানুষের চিত্তে দোলা দিচ্ছে। প্রায় ৩৩ একর জায়গায় তিনি এই শিমুল বাগানটি পরিকল্পিতভাবেই প্রকৃতিসুন্দর পরিবেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাগানের প্রায় ২ হাজার বৃক্ষ নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন। পরিচর্যাও করেছেন তিনি। তিনি মানুষকে সুন্দরের মৌতাতে মাতাতে এই উদ্যোগ নিলেও তার অবর্তমানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দূর দূরান্তের প্রকৃতিপ্রেমীরা এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন। বাগানে এসে সুন্দরে হারালেও থাকা-খাওয়া বা সাময়িক অবস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় পূর্ণ আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এদিকে এই বাগান দেখতে এসে ভ্রমণার্থীরা পাশের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্প ও বড়গোপটিলাও সহজে দেখে আসছেন। এক সময় অনেক দুর্গম থাকলেও আগের তুলনায় এখন যোগাযোগ কিছুটা সহজ হওয়ায় লোকসমাগম বাড়ছেই। স্থানীয়রা জানান, বাগানে এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। অনেক সংগঠন নিয়মিত বনভোজনও করছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অন্তত ৫০ হাজার দর্শনার্থী বাগানে এসেছেন বলে জানান অন্যতম স্বত্বাধিকারী রাখাব উদ্দিন।
সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী রোকসানা আক্তার রূপা বলেন, অনেক ধুলোবালি আর ভাঙ্গাচোরা পথ পেরিয়ে বাগানে এসে লাল শিমুল ফুলের নাচন দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে। এর আগে পত্রপত্রিকা আর ইন্টারনেটে দেখেছি এর তুমুল সৌন্দর্য্য। আজ সপরিবারে এসে তা দেখতে পেয়ে মনটাই আনন্দে ভরে গেছে। এই সুন্দর দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়–ক বিশ্বময়।
ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা শাহনাজ পারভিন সপরিবারে পয়লা ফালগুনে শিমুল বাগান দেখতে ছুটে এসেছেন ঢাকা থেকে। তার সঙ্গে পরিবারের লোকজনসহ সহকর্মীরাও এসেছেন। তারা সবাই প্রথম বারের মতো শিমুল বাগান দেখে যারপরনাই আনন্দিত। শাহনাজ পারভিন বলেন, এখানে সৌন্দর্য্য মন কেড়ে নেয়। একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে নদী-এমন প্রকৃতির সুন্দর স্থানে বাগানটির আকর্ষণ আরো বৃদ্ধি করেছে। আর এই সময়ে ফুল ফোটায় বাগানটি রঙিন হয়ে ওঠে। সেই রঙে আমরা আজ মন রাঙিয়েছি। কিন্তু আমাদের মতো দূরের পর্যটকদের অবস্থান করা বা রিফ্রেশমেন্টের কোন ব্যবস্থা নেই। এতে আমাদের সমস্যা হয়। এখানে আবাসিক ব্যবস্থা বা খাবার-দাবারের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
বাগানের অন্যতম স্বত্বাধিকারী ও জেলা পরিষদ সদস্য সেলিনা আবেদীন বলেন, এটা এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্রাইভেট শিমুল বাগান। আমার বাবা মানুষকে আনন্দ দিতে বাগানটি করেছিলেন। এখন বাবা না থাকলেও মানুষের আনন্দের মধ্যে তিনি বেঁচে আছেন। তিনি বলেন, আমাদের পাশাপাশি সরকার যদি এই বাগানকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে পর্যটন উপযোগী অবকাঠামো করে তাহলে সারাদেশের মানুষের জন্য ভালো হয়। তারা পূর্ণমাত্রায় আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com