বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতির দেশ। এই দেশের অর্থনীতির মেরুদ- কৃষি। তাই এখানে ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ এই রাজনীতিক বুলিটি বিশেষভাবে প্রচলিত ও জনপ্রিয়ও বটে। যেমন ভাটি অঞ্চলে এখন প্রচলিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে’ স্লোগানটি।
আমাদের বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকার কৃষকের কল্যাণে প্রায়শই বিভিন্ন নীতিনির্ধারণ ও কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন এবং কৃষকরা সেগুলো থেকে উপকৃত হবেন বলে সঙ্গত কারণেই প্রত্যাশাও করে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হতে দেখা যায় না। কোনও না কোনও আর্থনীতিক ফাঁক-ফোঁকড় বা ব্যবসায়িক ফাঁদের ফেরে পড়ে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ বরাবরের মতোন শিকেয় ঝুলতে থাকে, ছিঁড়ে পড়ে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় : সরকারের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয়ের নীতির সার্বিক ব্যর্থতা। সে-নীতি কার্যত ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের হাতে মুনাফার থলে ধরিয়ে দেয়, কৃষকরা প্রকৃতপ্রস্তাবে সরকারি নীতির উপকারভোগী হতে পারে না। এবার সরকারের পক্ষ থেকে ভেবেচিন্তে কৃষকের উপকারার্থে চাল রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি সাধু সিদ্ধান্ত। কিন্তু সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে ধান কেনার সাধু সিদ্ধান্তের মতোই এই চাল রপ্তানি না করার সিদ্ধান্তের মধ্যেও শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যাচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। তাঁরা মনে করেন : ধান গোলায় তোলার সময়েই কৃষকেরা তাদের সংসারে লেগে থাকা অভাব-অনটনের কারণে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফলে একদিকে কৃষকদের হাতে বিক্রয়যোগ্য ধান থাকে না ও অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের হাতে বিক্রয়যোগ্য ধানের মজুত বিশালাকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় মজুতদারির নিয়ম প্রয়োগ করে বাজারে চালের কৃত্রিম অভাব তৈরি করে বেশি দামে চাল বিক্রি করে তারা তাদের মুনাফা নিশ্চিত করে অনায়াসে।
আর কথা বাড়াতে চাই না। কেবল বলি : কৃষকের ধান কৃষককে বিক্রি করতে দিন। কৃষকরা যাতে ফসল ঘরে তোলতে না তোলতেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য না হয়, তার একটি আর্থনীতিক নীতি সরকারকে নিশ্চিতভাবে কার্যকর করতে হবে। এই নীতিটি কী হবে, তাও ভেবেচিন্তে সরকারকেই বের করতে হবে। অন্যথায় প্রতি বছরই কৃষকের বাম্পার ফলনের কল্যাণে ব্যবসায়ীরা মুনাফার হরিলুটের মচ্ছবে মাতবে মহাসমারোহে, কারও কীছুই করার থাকবে না।