রোজার মাস শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। রোজার মাসকে সংযমের মাস বলা হয়। মুমিন মুসলমান এই সাসে প্রকৃতপ্রস্তাবে জীবনের সব ক্ষেত্রে সংযম পালন করে থাকেন। এই জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এই মাসকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস বলে ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রমজান মানুষকে ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার এবং মানুষের মনের রিপুগুলোকে সংযত করে। দীন-দরিদ্র, ক্ষুধার্তদের কষ্ট ও যন্ত্রণা, ব্যথা ও বেদনা বুঝতে সাহায্য করে।’ কিন্তু বাস্তবে সমাজে রমজানের এইসব ইতিবাচক কর্মক্রিয়ার কার্যকারিতা ও প্রতিফলন খুব বেশি একটা প্রতিফলিত হতে দেখা যায় না। বরং এর বিপরীত প্রক্রিয়ার প্রভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয়। যেমন আমরা প্রতি বছর লক্ষ করে থাকি যে, এই সংযমের মাসে কীছু ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যবসায়ী চরম অসংযমের পরিচয় দিয়ে থাকেন। তারা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য রমজান মাসে যে-সব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় সে-সব পণ্যের বাজার দর অতিরিক্ত হারে বাড়িয়ে দেন। এতে করে আমাদের দেশের মতো আকাশ পাতাল ধনবৈষম্যের দেশে অধিকাংশ রোজাদাররা সে-সব পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে অর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হন। অথচ এমন দেশ পৃথিবীতে আছে যেখানে রমজানের মাসে রোজাদারদের জন্য ব্যবসায়ীরা কীছু কীছু পণ্য বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। আমাদের দেশে তেমন করা যাবে না বা এমন করতে বলি না। কিন্তু অন্যায় উপায়ে পণ্যের দাম বাড়ানোর ব্যাপারটি আমাদের ব্যবসায়ীরা প্রতিরোধ না করতে পারলেও ইচ্ছে করলেই সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম যথাসম্ভব কম করে দিতে পারেন। লাভ না হয় রমজান মাসে একটু কমই করা হলো।
বাজারে এখন একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে পাঁচশত টাকায় এবং এই সময়েই এক মণ ধানের দাম মাত্র পাঁচ শত টাকা। এটা হচ্ছে মূলত বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত মুক্তবাজার অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য মুনাফা অর্জনের প্রবণতার কারণে। অস্বাভাবিক এই তৎপরতা থেকে বিশেষ করে রমজান মাসে রোজাদারদেরকে রক্ষা করার কোনও উপায় এখনও পর্যন্ত আমাদের সমাজে গড়ে উঠেনি। আমরা আশা করবো এবারের রমজান মাসে রোজাদারদের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো থেকে অতিরিক্ত মুনাফাকরণের কৌশলটি পরিহার করা হবে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা অব্যাহত রাখা হবে।