সাহায্যের আবেদন। প্রত্রিকান্তরে এমন উপশিরোনামের নিচে একুট বড় হরফে আরেকটি প্রাসঙ্গিক ও মূলশিরোনাম ছাপিয়ে, বিশেষ করে কোনও ব্যক্তির অসুস্থতার বিবরণ উদ্ধৃত করে, আবেদন প্রকাশিত হয়। অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষের বয়সের কোনও গাছপাথর থাকে না। তাঁরা শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে-কোনও বয়সের হতে পারেন। আবেদন করা হয় মূলত সরকার ও দেশর বিত্তবানদের প্রতি। আবেদনের পেছনের কারণটি প্রায়ই এমন মর্মন্তুদ থাকে যে, সেটা বিশ্লেষণ করে বুঝাবার কীছু নেই, কেবল বলা যায় আসলেই বিষয়টি হৃদয়বিদারক ও বিবেচনাকে বিচলিত করার মতো সংবেদনশীল। এরকম আবেদন দেশের ভেতরে বছরে কতোগুলো হয় তার কোনও পরিসংখ্যান বোধ করি নেই। পরিসংখ্যান করা হলে হয় তো দেখা যাবে যে, সে সংখ্যাটা নিতান্ত কম নয় এবং সেটা বাংলাদেশের উন্নয়নে নিহিত নেতিবাচকতাকে প্রকটিত করবে এবং যে-কোনও সমাজসচেতন মানুষের মনটা স্বাভাবিকভাবেই একটা ‘ভাল্লাগে না’ মতোন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
গতকালের দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘৫০ হাজার টাকার জন্য অস্ত্রোপচার হচ্ছে না শিশুটির’। তার বয়স ১২ বছর। সে ফুসফুসের জটিল সংক্রমণের শিকার। চিকিৎসকদের অভিমত দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে উঠবে। তার অস্ত্রোপচারের জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তার দিনমজুর বাবা এই পরিমাণ টাকা যোগান দিতে পারছেন না। তিনি সন্তানের চিকিৎসার্থে সমাজের বিত্তবানদের বরাবরে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
একটি সমাজে ধনী ও গরিব শ্রেণি সৃষ্টি হয় সাধারণত সমাজে প্রতিষ্ঠিত আর্থসামজিক বিন্যাসের বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে। শোষণভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকলে সমাজের একাংশের মানুষকে অসুস্থ হলে টাকার অভাবে চিকিৎসাসেবা ক্রয় করার অপারগতা হেতু নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য নিরোপায় অপেক্ষার দ্বারস্থ হতে হবে এবং যে-কোনও বিবেচনায় এইরূপ সমাজবাস্তবতা মানবিকতাবিরোধী। আমাদের দেশে অন্যান্য বহু ক্ষেত্রের মতোই চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এই মানবিকতাবিরোধী সমাজবাস্তবতা বিদ্যমান আছে। রোগীকে কিংবা চিকিৎসক কাউকেই এর জন্য দায়ী করা যায় না। রোগী টাকা দিতে পারছেন না, চিকিৎসক টাকা ছাড়া চিকিৎসা দিতে পারছেন না। সংকট পণ্যায়নের। এখানে নিরাময় বা রোগারোগ্যকে দামি পণ্য করে তোলা হয়েছে। আরও একটু গভীরভাবে ভাবলে বুঝা যায় যে, প্রকৃতপ্রস্তাবে বেঁচে থাকাকে বা জীবনকে পণ্য করে তোলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থা করতে হবে যাতে চিকিৎসক টাকা ছাড়াই চিকিৎসাসেবা রোগীকে দিতে পারেন। রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ককে পণ্যায়নের বহির্ভূত করে নিতে হবে। এমন একটি ব্যবস্থা চাই, যে-আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবাকে পণ্য বিবেচনা করা যাবে না। যেমন সরকার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দিয়েছেন। বিদগ্ধ কেউ কেউ মনে করেন, সমাজে মানুষের ব্যাধির নিরাময়কে পণ্য করে তোলা কোনও সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। একটি উন্নত ও সুস্থ সমাজের লক্ষণ হওয়া উচিৎ সমাজের সকলের জন্য নিখরচায় চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করা এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্রের নাগরিককে অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে। নাগরিক সুস্থ না হলে রাষ্ট্র সুস্থ হওয়ার শর্ত প্রকৃতিগতভাবেই লঙ্ঘিত হয়।
নাগরিক সুস্থ না হলে রাষ্ট্র সুস্থ থাকার শর্ত প্রকৃতিগতভাবেই লঙ্ঘিত হয়
সাহায্যের আবেদন। প্রত্রিকান্তরে এমন উপশিরোনামের নিচে একুট বড় হরফে আরেকটি প্রাসঙ্গিক ও মূলশিরোনাম ছাপিয়ে, বিশেষ করে কোনও ব্যক্তির অসুস্থতার বিবরণ উদ্ধৃত করে, আবেদন প্রকাশিত হয়। অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষের বয়সের কোনও গাছপাথর থাকে না। তাঁরা শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে-কোনও বয়সের হতে পারেন। আবেদন করা হয় মূলত সরকার ও দেশর বিত্তবানদের প্রতি। আবেদনের পেছনের কারণটি প্রায়ই এমন মর্মন্তুদ থাকে যে, সেটা বিশ্লেষণ করে বুঝাবার কীছু নেই, কেবল বলা যায় আসলেই বিষয়টি হৃদয়বিদারক ও বিবেচনাকে বিচলিত করার মতো সংবেদনশীল। এরকম আবেদন দেশের ভেতরে বছরে কতোগুলো হয় তার কোনও পরিসংখ্যান বোধ করি নেই। পরিসংখ্যান করা হলে হয় তো দেখা যাবে যে, সে সংখ্যাটা নিতান্ত কম নয় এবং সেটা বাংলাদেশের উন্নয়নে নিহিত নেতিবাচকতাকে প্রকটিত করবে এবং যে-কোনও সমাজসচেতন মানুষের মনটা স্বাভাবিকভাবেই একটা ‘ভাল্লাগে না’ মতোন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
গতকালের দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘৫০ হাজার টাকার জন্য অস্ত্রোপচার হচ্ছে না শিশুটির’। তার বয়স ১২ বছর। সে ফুসফুসের জটিল সংক্রমণের শিকার। চিকিৎসকদের অভিমত দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে উঠবে। তার অস্ত্রোপচারের জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তার দিনমজুর বাবা এই পরিমাণ টাকা যোগান দিতে পারছেন না। তিনি সন্তানের চিকিৎসার্থে সমাজের বিত্তবানদের বরাবরে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
একটি সমাজে ধনী ও গরিব শ্রেণি সৃষ্টি হয় সাধারণত সমাজে প্রতিষ্ঠিত আর্থসামজিক বিন্যাসের বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে। শোষণভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকলে সমাজের একাংশের মানুষকে অসুস্থ হলে টাকার অভাবে চিকিৎসাসেবা ক্রয় করার অপারগতা হেতু নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য নিরোপায় অপেক্ষার দ্বারস্থ হতে হবে এবং যে-কোনও বিবেচনায় এইরূপ সমাজবাস্তবতা মানবিকতাবিরোধী। আমাদের দেশে অন্যান্য বহু ক্ষেত্রের মতোই চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এই মানবিকতাবিরোধী সমাজবাস্তবতা বিদ্যমান আছে। রোগীকে কিংবা চিকিৎসক কাউকেই এর জন্য দায়ী করা যায় না। রোগী টাকা দিতে পারছেন না, চিকিৎসক টাকা ছাড়া চিকিৎসা দিতে পারছেন না। সংকট পণ্যায়নের। এখানে নিরাময় বা রোগারোগ্যকে দামি পণ্য করে তোলা হয়েছে। আরও একটু গভীরভাবে ভাবলে বুঝা যায় যে, প্রকৃতপ্রস্তাবে বেঁচে থাকাকে বা জীবনকে পণ্য করে তোলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থা করতে হবে যাতে চিকিৎসক টাকা ছাড়াই চিকিৎসাসেবা রোগীকে দিতে পারেন। রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ককে পণ্যায়নের বহির্ভূত করে নিতে হবে। এমন একটি ব্যবস্থা চাই, যে-আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবাকে পণ্য বিবেচনা করা যাবে না। যেমন সরকার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দিয়েছেন। বিদগ্ধ কেউ কেউ মনে করেন, সমাজে মানুষের ব্যাধির নিরাময়কে পণ্য করে তোলা কোনও সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। একটি উন্নত ও সুস্থ সমাজের লক্ষণ হওয়া উচিৎ সমাজের সকলের জন্য নিখরচায় চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করা এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্রের নাগরিককে অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে। নাগরিক সুস্থ না হলে রাষ্ট্র সুস্থ হওয়ার শর্ত প্রকৃতিগতভাবেই লঙ্ঘিত হয়।