কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচনমুখি দেশ। এই কথাটা একেবারে পুরোপুরি মিথ্যেও নয়। শতভাগ সত্যি না হলেও গণতান্ত্রিক বিবেচনায় সিংহভাগ সত্যি এই বাক্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সকল নিয়ম মেনে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এ দেশে বিজিতপক্ষ সব সময়েই বিজয়ীপক্ষের প্রতি কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়, কোনও না কোনও পক্ষের পক্ষ থেকে। মাঝে মাঝে এমন হয়, অকারণেও কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। গণমাধ্যমে হইচই চলে। জনসাধারণের মাঝে আলোড়ন উঠে। আলোড়ন একসময় স্থিমিত হয়ে যায়।
পাক-আমলে সত্তুরের নির্বাচনে কোনও কারচুপি হয়নি। সে ভোটে বাঙালি জাতিসত্তার নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছিল। কিন্তু সে-বিজয়কে মানা হয়নি, প্রকারান্তরে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এইটাই বোধ করি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে নির্বাচন নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কারচুপি। পরিতাপের বিষয় এই যে, ঐতিহাসিক এই নির্বাচনে কারচুপি না হলেও নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ছিল।
আর এখন আরও বেশি পরিতাপের বিষয় যে, স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনীতিক বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করতে করতে বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেখেশুনে মনে হয়, ভোটাভোটিতে কারচুপির অভিযোগ তোলা এ দেশে একটি প্রচলিত রীতিনীতির মতো সাধারণ একটি নিয়মে পর্যবশিত হয়ে পড়েছে। বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, এখন এ দেশে কারচুপি করাটাও অনেকটা কথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির আচরণের অঙ্গ হয়ে পড়েছে।
কাউকে দোষারূপ করে লাভ নেই। দলের ইস্তেহার অনুসারে রাজনীতিক দলগুলোর আদর্শ-উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন ভোটাভোটির ময়দানে তাঁরা, ‘নির্বাচন মানি জয় আমার’ নীতির ধারক ও বাহক। হেনতেন প্রকারেণ জয় চাই। জয়ের সঙ্গে ক্ষমতার যোগ আছে তাই। কেন এমন হলো তার বিশ্লেষণের অবকাশ এখানে নেই।
এমতাবস্থায় দেশে নির্বাচনী হাওয়া জোরেসুরে বইতে শুরু করেছে। প্রতিবারই এমন হয়। এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দেওয়ার প্রত্যাশা দিকে দিকে ব্যক্ত করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ নেমে পড়েছেন।
আমরা দেশের সাধারণ ভোটারদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা করছি এবারের ভোট সুষ্ঠু পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে, কোনও বিপর্যয় ব্যতীত অনুষ্ঠিত হবে।