নদীমাতৃক দেশ বাংালদেশ। এই দেশের নিম্নাঞ্চল বলে খ্যাত সুনামগঞ্জ নদী, উপনদী, বিল, খাল, বাঁওড়, হাওরের দেশ। এখানে প্রতি বর্ষাতে প্লাবনপরিপ্লাবিত অববাহিকায় পলি পড়ার একটা মহামচ্ছব ঘটে থাকে জনচক্ষুর অলক্ষ্যে। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতিবেশকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগেকার বলে বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করেছেন। এ থেকে অনুমান করা যায় যে সুনামগঞ্জ আসলে অতিপ্রাচীন কালে একময় সমুদ্রময় ছিল। কালক্রমে সমুদ্রের তলদেশ জেগে উঠে বর্তমানের জনবসতি গড়ার উপযুক্ততা লাভ করে। প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনেই এখানে প্রতি বছর নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যকার জলাভূমি শ্রেণির ভূমি ভরাট হওয়ার একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কালাতিপাত করে। বছরের পর বছর অতিক্রমের পর প্রকারান্তরে নদীর নাব্যতা, খাল-বিল-বাঁওড় ইত্যকার জলাধার-জলাভূমির গভীরতা হারিয়ে যায়। এই কারণে নদীর গভীরতা ফিরিয়ে এনে জলনিষ্কাশন নিশ্চিকরণের মাধমে বণ্যানিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা কার্যকর করতে এখানে অতিসম্প্রতি নদীখনন কাজ পরিচালিত হচ্ছে। মোটকথা এখানে দিনে দিনে ভূমির শ্রেণি পরিববর্তন হচ্ছে,‘ বিলশ্রেণি’র জমি ‘কৃষিশ্রেণি’ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কোন একসময় হয় তো জায়গাটি জলে থৈ থৈ বিল ছিল কিন্তু বর্তামানে লোকেরা সেখানে চকৃষিকাজ বা চাষাবাদ করছে, পাশাপাশি বাড়িঘর তোলে বসবাস করছে। প্রাকৃতিকভাবে ভূমির এইরূপ শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে ক্ষেত্রবিশেষে এমন হতে পারে যে, সরকারি হিসেবের খাতায় যে-জমি বিলশ্রেণি বলে নথিভুক্ত হয়েছে সে ভূমিটা বাস্তবে কৃষিশ্রেণির ভূমি।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদপ্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্রকৃতপক্ষে এই জমি কৃষিশ্রেণি প্রকৃতির। সরকারি রেকর্ডে বিল থাকায় মূল্যবান সরকারি ভূমি সরকারি উন্নয়ন স্থাপনার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে সরকারকে ভূমিঅধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। অবিলম্বে জমির শ্রেণি পরিবর্তন কারর দাবি জনান মালেক হুসেন পীর।’ এমন ভুলভ্রান্তি সংঘটিত হতেই পারে। কিন্ত ভুল ধরা পড়ার পর এই ভুলের কারণে ভবিষ্যতে কোনওরূপ জটিলতা উপস্থিত হওয়ার আগেই তৎক্ষণাৎ সেটা শুদ্ধ করে নেওয়াই বিধেয়। কিন্তু প্রাশাসনের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে অধস্তনস্তরের কারণিক পর্যায়ে, একধরণের করিবকর্মনীতি বা এইরূপ ভুলের ব্যাপারগুলোকে জেনেশনে উপেক্ষা করার নীতি অনুসরণের ফলে প্রায়ই এইরূপ সংশোধনগুলো হয়ে উঠে না। এইরূপ জটিলতার কারণে সুনামগঞ্জ শহরের ভেতরে ৭২.২৫ একর জমি ভুলক্রমে বিলশ্রেণির উল্লেখ থাকায় সরকারি স্থাপনা তৈরির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছ না।
আপাতত এইটুকু পর্যন্তই। বেশি কথাকপচানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। বলা একান্ত জরুরি বলে বলছি, প্রথমত জরুরিভিত্তিতে এই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হোক এবং দ্বিতীয়ত এই জমির উপর প্রস্তাবিত নার্সদের ট্রেনিং সেন্টার ও হাসপাতাল তৈরির ব্যবস্থা নিশ্চিত কারা হোক।