বিশেষ প্রতিনিধি ::
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ দুইশত বছরের পুরনো চুরি যাওয়া রাধামাধব ও দেবী কালীর মূর্তি উদ্ধার করেছে। শুক্রবার ভোররাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় যৌথ অভিযান চালিয়ে মূল্যবান এই মূর্তিগুলো উদ্ধার করা হয়।
জয়কলস ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা যোগেশ ব্যানার্জীর বাড়ির মন্দির (ঠাকুর ঘর) থেকে রাধামাধব, কালী ও দুর্গাসহ দেবদেবীর দুইশত বছরের পুরনো চারটি মূল্যবান মূর্তি গত ১৮ সেপ্টেম্বর চুরি গিয়েছিল। শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন উদ্ধারকৃত মূর্তি সাংবাদিকদের সামনে প্রদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্ধার অভিযানের বর্ণনা দেন। এসময় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর থানার সার্কেল সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মাহবুব আলমও উপস্থিত ছিলেন।
মূর্তি উদ্ধারের সময় সন্দেহভাজন দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো, হাসনাবাজ গ্রামের আলী নূরের ছেলে সুমন মিয়া (২৪) ও শাল্লা থানার সহদেবপুর গ্রামের বেদন আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া (২৪)। জুয়েল দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলা বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাঙ্গারি ব্যবসা করে। তাদের আটকের পরই মূর্তিগুলোর অবস্থান জেনে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা যোগেশ ব্যানার্জীর বাড়ির মন্দির (ঠাকুর ঘর) থেকে চারটি মূর্তিসহ ম-পের মূল্যবান মূর্তিগুলো চুরি যায়। মূর্তিগুলো পিতল ও কাসার তৈরি। পারিবারিকভাবে কয়েকশ বছর ধরে মন্দিরে এগুলো সংরক্ষিত ছিল।
পুলিশ জানায়, চুরি যাওয়া মূর্তিগুলো উদ্ধার করতে অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে সিলেটস্থ দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী’র নেতৃত্বে ও এসআই ইমতিয়াজ সরকার, এএসআই জাকির হোসেনসহ পুলিশ অভিযান চালায়। সিলেটের কদমতলি লাউড়াই থেকে ২টি এবং শাল্লা থেকে একটি মূর্তি উদ্ধার করা হয়। আরো একটি মূর্তি উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে বলে জানায় পুলিশ।
জানা গেছে, প্রথমে সন্দেহভাজন আটককৃত সুমন মিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাগলা বাজার মাদরাসাপাড়া এলাকার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শাল্লা উপজেলার মহদেবপুর গ্রামের গেদন আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া (২৪)-কে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। তার তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তিনটি পিতল ও কাসার মূর্তিসহ চুরি যাওয়া অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে কাসার তৈরি কালি ও রাধা মাধবের মূর্তি ৩টি, ৪টি কাসার কলস, ১টি কাসার বাসন, ৪টি কাসার লুটা, ১টি কাসার ঘটি, ৩টি কাসার ধূপদানি, ২টি কাসার ক্লাস, ৬টি কাসার তাল, একটি কাসার বাটি, ২টি কাসার ঘণ্টি উদ্ধার হয়। তবে এখনো চুরি যাওয়া মূল্যবান দুর্গা মূর্তিটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা গেছে মানিকপুর থেকে পারিবারিক সংগৃহিত এসব মূল্যবান ধাতুর পুরনো মূর্তি ও উপকরণ চুরি যাওয়ার পর দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা, সিলেটের গোলাপগঞ্জ এর সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমন্ত ব্যানার্জীর চাচা অসিত মাধব ব্যানার্জী গত ১৯ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার পরেই পুলিশ চুরি যাওয়া মূল্যবান মূর্তিগুলো উদ্ধারে নামে। নানাভাবে বিভিন্ন সূত্রে খবর সংগ্রহ করে অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও শাল্লায় যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে সিলেট ও শাল্লা থেকে তিনটি মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটি মূর্তিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা নানা সূত্রে খবর সংগ্রহ করে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযানে নামি। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লাউড়াই থেকে ২টি এবং শাল্লা থেকে একটি মূর্তি উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। চুরি যাওয়া অন্য মূর্তিটিও উদ্ধার হবে।