শ্রীকৃষ্ণের বিখ্যাত উক্তি, ‘সম্ভবামি যুগে যুগে’। অর্থাৎ ‘আমি যুগে যুগে আবির্ভূত হবো।’ কোথায় তিনি আবির্ভূত হবেন, সেই জগতটা কেমন? আর কথা হলো, তিনি আসবেনই বা কেন? যে-জন্য আসবেন তার উত্তর আছে তাঁর বাণীর শেষাংশে। সেখানে তিনি বলেছেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনার্থে তিনি জগতে আবার জন্ম নেবেন। জগৎ যখন দুষ্টদের জবরদখলের উপনিবেশে পরিণত হবে, শিষ্টদের জীবন দুষ্টদের অত্যাচারে নরকগোলজার হয়ে উঠবে, তখন দুর্ভোগে পতিত শিষ্টদের রক্ষার্থে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হবেন। তাঁর আবির্ভাব এইভাবে জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বার বার হবে।
শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরে দুষ্টদের দমনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হয়েছিল। আর বর্তমান বিশ্বায়িত জগতে যুদ্ধ চলছে। প-িতরা বলছেন পুঁজিবাদ মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না লাগিয়ে খ-যুদ্ধের আবর্তনে পৃথিবীকে আবদ্ধ করে রেখেছে। ইতোমধ্যে পৃথিবীতে দুইটি বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেছে। এটম বোমা ফাটানো হয়েছে। হিরোশিমা নাগাসাকি শহর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল পারমাণবিক বোমার আঘাতে। তারপরও এটম বোমার চেয়ে লক্ষগুণ শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা বানানো হয়েছে। পৃথিবীতে ভয় দেখিয়ে শাসন ও শোষণ করার জন্যে। আর এখন বিশে^র দিকে দিকে চলছে বিভিন্ন ধরনের বিরোধ। বাংলাদেশের ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট। এখানে পুঁজিবাদের দোসর মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিত্ব ছড়িয়ে চলেছে নিরন্তর। শান্তির ঠিকানায় যাত্রাপর মানুষকে মাঝ পথে উৎপীড়ন করছে একদল দুষ্ট লোক। এইসব দুষ্টরা অশুভের পূজারি। এই দুষ্টদেরকেই পিষ্ট করতে শ্রীকৃষ্ণ আসেন পৃথিবীতে বার বার। সনাতনধর্মের মূল বাণী এটাই। বাংলাদেশের হিন্দুরা অর্থাৎ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এবারের জন্মাষ্টমীতেও শ্রীকৃষ্ণের ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ এই মানবতাবাদী আদর্শ বিশ্বের মানবতাবাদীদের মূলমন্ত্র হয়ে উঠুক, এই আহ্বান জানিয়ে জন্মাষ্টমী উৎসবটি পালনে ব্রতী হয়েছেন।
এই শুভ জন্মাষ্টমীতে আমরা দেশের মঙ্গল কামনা করছি। দেশের বিরুদ্ধে সকল অশুভশক্তির বিনাশ হোক, দুষ্টরা সমূলে নির্মূল হোক, সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল হোক। শ্রীকৃষ্ণের মানবতার আদর্শের জয় হোক – এটাই প্রত্যাশা।