একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি, গতকালের পত্রিকা দৈনিক সুনামকণ্ঠ থেকে। “কিন্তু বছর খানেক পেরুনোর আগেই ঝড়ে সিসি ক্যামেরার সংযোগ তার ছিঁড়ে যায়। পরে কয়েক দফা ঝড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অধিকাংশ সিসি ক্যামেরার সংযোগ তার। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরার সংযোগ। তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে সিসি ক্যামেরাগুলো। পানি পড়ে জং ধরেছে অনেক সিসি ক্যামেরায়।” এই হলো সুনামগঞ্জ শহরে লাগানো সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ লেজেগোবরে অবস্থা, যাকে বলে, অচলাবস্থার মোটামুটি হালহকিকত। এটি নির্মাণ-বিনির্মাণ উন্নয়নকর্মের ভেতরকার অচলাবস্থার আংশিক বাস্তবতার বিবরণও বটে, যে-বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। উন্নয়নকাজে, আরও আরও আধুনিক হওয়ার কাজে আমাদের দেশকে পিছিয়ে রাখার দুরভিসন্ধিতে আমাদেরই একাংশ কাজ করে চলেছে। তারা প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রমাণ করতে চায় আমরা আধুনিক নই। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জন্য নয়। ক্যামেরা লাগানো হবে বটে, কিন্তু ক্যামেরাগুলোর তার ছিঁড়ে গেলে, জলে সজল হয়ে জং ধরে গেলে তার জুড়া দেওয়ার ও জং ছাড়ানোর কোনও ব্যবস্থা রাখা হবে না। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কোনও কর্তব্য নির্ধারণ করা হবে না। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিশেষ কাজ ব্যাহত হলে, পূর্বাস্থায় ফিরে যাওয়া যাবে কেবল, এর বেশি কীছু হবে বলে ভাবা হবে না, বখাটেদের উৎপাত চলতেই থাকবে যেমন চলছিল। ২০১৭ সালের শেষের দিকে সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের অর্থায়নে শহরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রকল্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, তো তাতে কার কী? দেশের সিংহভাগ উন্নয়নকর্মই বাস্তবে এইরূপ নি¤œমানের কাজের পর্যায়ের। এখানে প্রায় সকল আধুনিক প্রযুক্তিকেই ব্যর্থ করে দিয়ে দেশকে অনাধুনিক করে রাখার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। অথবা ব্যাপারটা এমন যে, সমাজের একাংশ অন্য অংশকে আধুনিক জীবনের সুবিধা দেওয়ার আগে আধুনিক জীবনের সুযোগ দেওয়ার দামটা তোলে নিচ্ছে এইভাবে উন্নয়নের কাজের অর্থ আত্মসাৎ করে ও উন্নয়নকে একদিনের জন্য হলেও পিছিয়ে দিয়ে। কারণ উন্নয়নে দেশ পিছিয়ে থাকলে দুর্নীতি এগিয়ে চলে, দুর্নীতি সচল থাকে। উন্নয়ন মানেই দুর্নীতির মৃত্যু। এই দুর্নীতি ও প্রতারণার প্রকল্প সচল আছে এক অর্থে সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। আমাদের সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কাছে সে-অপপ্রয়াস পরাভূত হয়েছে। এই দেশকে পিছিয়ে রাখার প্রকল্পের চলমানতার ভেতরে সড়ক, সেতু, দালানকোঠা, কারখানা কতো কীছুই তো হচ্ছে দেশে এবং মাসদুয়েক থেকে বছর দুয়েকের ভেতরে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় চলে গিয়ে ধ্বসে পড়ছে, ভেঙে যাচ্ছে, অকেজো হয়ে পড়ছে। কারও কীছু করার থাকছে না। আইন সচল হচ্ছে না। সমাজের অচলায়তন ভাঙছে না।
এই কারও কীছু করার থাকছে না, এই পুরনো সংস্কৃতির অচলায়তন ভাঙতে হবে। সিসি ক্যামেরাগুলো মেরামত করতে হবে। কালিবাড়ি থেকে হোসেন বখত চত্বর, কাজির পয়েন্ট এলাকায় বখাটের উৎপাত বন্ধ করতে হবে। সিসি ক্যামেরার এই অচলাবস্থার বিলম্বিত হওয়ার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে প্রতিকারের বিহিতব্যবস্থা করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না প্রতিক্রিয়াশীলরা সমাজটাকে সিসি ক্যামেরার বাইরে রাখতে চায়। ক্যামেরা তাদের অপরাধের চিহ্নকে মুছে দিতে জানে না বলে।