দেশের মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগ মানুষ বাস করে গ্রামে। গ্রামের ছোটখাটো বিরোধগুলোর সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গ্রাম আদালত। এ আদালতের যৌক্তিকতা ও অপরিহার্যতা বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলের মতামতের ভিত্তিতে আইনীভাবে বা ন্যায় সঙ্গত আলোচনায় সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে তা সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছোটখাটো অপরাধ বা ঝগড়া মিটাতে প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সক্রিয় রাখা অপরিহার্য। গ্রাম আদালতে সহজভাবে যেকোনো সমস্যা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু জেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের কমিটি আছে কিন্তু কমিটির কার্যক্রম নেই।
স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদের স্ট্যাডিং কমিটির একটি গ্রাম আদালত। যাঁরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তাদের অনেকেই গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কে অবগত নন। তাই গ্রাম আদালতের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে।
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে গ্রাম আদালতের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয়ভাবে ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণকে প্রচলিত বিচারপ্রক্রিয়ার ব্যয়বহুল ও দীর্ঘকালীন ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়া। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে স্বল্প খরচে তাদের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দেয়া।
গ্রাম আদালতের বিধান অনুসারে ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের নিজ নিজ এলাকার ছোটখাটো সমস্যা গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারেন। ১০ জন সদস্য নিয়ে এ আদালত গঠন করা হয়। যেসব বিচার গ্রাম আদালত করতে পারবে সেসব মামলা গ্রাম আদালতে রাখা হয়। যেগুলোতে গ্রাম আদালতের এখতিয়ার নেই, সেগুলো উচ্চতর কোর্টে প্রেরণ করতে হয়।
গ্রাম আদালতকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হলে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ আদালতের বিচারিক ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রাম আদালতের অবকাঠামোগত সমস্যা এবং উপকরণের চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি বছর গ্রাম আদালতের উপকরণ প্রদান ও ইউপিতে জনবল বৃদ্ধি করা দরকার। গ্রাম আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিধি অনুযায়ী আদালত পরিচালনার জন্য ইউপিগুলোতে এজলাসসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। আইনে যেসব সুন্দর বিধান রয়েছে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।