ছাতক প্রতিনিধি ::
ছাতকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
ওইদিন বিকেলে চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেল ও বিল্লাল আহমদের মধ্যে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদসহ ক’জন জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা প্রশাসনিক ভবনে আশ্রয় নেন। এ খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সাহাব উদ্দিন সাহেল ও তার সমর্থকরা পুলিশের প্রতি উত্তেজিত হয়ে উঠে। পরে পুলিশ ও উপস্থিত নেতা-কর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এসময় চেয়ারম্যান সাহেলসহ অন্যান্যদের পরিষদ চত্বর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
জানা যায়, ওইদিন উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ ও সাহাব উদ্দিন সাহেলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে উভয় চেয়ারম্যানের সমর্থকরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। কিছু সময়ের মধ্যে সাহেল চেয়ারম্যানের পক্ষে মেয়র গ্রুপের সমর্থকরা উপজেলা চত্বরে অবস্থান নিলে গোটা প্রশাসনিক এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নিজেদের রক্ষায় বিল্লাল আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বাবুল রায়সহ তাদের পক্ষের ক’জন নেতা প্রশাসনিক ভবনে আশ্রয় নেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের স্ব-স্ব কক্ষের দরজা বন্ধ করে রাখেন। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি ঘটতে থাকলে থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবুল রায়সহ নেতারা অবরুদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এমপি মুহিবুর রহমান মানিক সমর্থকরা গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
অপরদিকে মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী সমর্থকরা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এসময় এমপি সমর্থক জিবরান রহমান নামের এক কলেজ ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে আহত অবস্থায় ছাতক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জিবরান আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মেয়র গ্রুপকে দায়ী করা হয়।
অপরদিকে, প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ প্রহরায় চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদসহ অন্যান্যদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। বিল্লাল আহমদ, বাবুল রায় গোবিন্দগঞ্জ পৌঁছলে এমপি সমর্থকরা ওসি আতিকুর রহমানের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয়। অবরোধ চলাকালে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ ও সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। উত্তপ্ত অবস্থার কারণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেল ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের মধ্যে রাজনৈতিক গ্রুপিংসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও দু’চেয়ারম্যানের মধ্যে একাধিকবার মুখোমুখি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিন জানান, মাসিক সমন্বয় সভা শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটেছে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ও প্রশাসনিক এলাকায় এমন অপ্রীতিকর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান জানান, মাসিক সমন্বয় সভা শেষে প্রায় আধঘণ্টা পর পরিষদ চত্বরের বাইরে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। যা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ করে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃজনক। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এর আগেও এ ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে।