1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবস : উন্নয়ন ও সহায়তা বঞ্চিত জেলার আদিবাসীরা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলার দুর্গম, পাহাড়ি খানাখন্দ, টিলা ও ঝোপঝাড়ে এখনো বসবাস করে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক (আদিবাসী) জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ হাজার মানুষ। গারো, খাসিয়া, হাজং এবং মনিপুরী মিলিয়ে ২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী জেলায় প্রায় ১ হাজার ৪৬৪ পরিবার বসবাস করে। জীবন ও সম্পদের অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে দিনকেদিন কমছে নিরীহ এই জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। রাষ্ট্রীয় ভোটাধিকারপ্রাপ্ত এ গোষ্ঠী রাষ্ট্রে সমান নাগরিক সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও নানাক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে তাদের ভোটপ্রার্থনা করলেও মূল উন্নয়ন ¯্রােত থেকে ছিটকে আছে তারা। তাদের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাক্সিক্ষত সহায়তা পৌঁছেনা। আদিকাল থেকে তারা বসবাস করলেও এখনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে ধর্মপাশা, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলায় হাজং, গারো, খাসিয়া, মনিপুরীসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৭ হাজার মানুষ বসবাস করে। তাছাড়া শাল্লা উপজেলা বাদে অন্যান্য উপজেলায়ও চাকরিসূত্রে কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে সুনাম ও শান্তি বজায় রেখে বসবাসকারী এই সম্প্রদায়ের লোকজন যাপিত জীবনে এখন নানা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাদের এলাকায় রাস্তাঘাট নেই। সরকারি সহায়তাও পৌঁছেনা। টিআর-কাবিটা সমাজের নিম্ন আয়ের ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার বরাদ্দ দিলেও তারা এক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার। এক সময়ের প্রচুর জমি-জিরেতের মালিক এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখন বাস্তুভিটা হারিয়ে দেশান্তরিও হচ্ছে। দিনকে দিন তারা গরিবে পরিণত হলেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় সরকারি সাহায্য সহযোগিতা কম পাচ্ছে। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় সরকার প্রতি বছর টিআর-কাবিটা-জিআরসহ নানা প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে থাকে তা থেকেও বঞ্চিত তারা। তাদের সহায়তা ও এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নেও সচরাচর কোন প্রকল্প নেননা জনপ্রতিনিধিরা। তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও সহায়তা বঞ্চিত। সরকার-টিআর-কাবিটার অর্ধেক বরাদ্দ দিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও আদিবাসীদের সেই সুবিধা ভোগ করতে দিচ্ছেনা জনপ্রতিনিধিরা। তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিশেষ একটি প্রকল্পে তাদের সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা কিছু শিক্ষা সহায়তা পেয়ে থাকে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত তাহিরপুর উপজেলায় টিআর প্রথম পর্যায়ে ৩০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ উপজেলার উত্তর বড়দল, উত্তরশ্রীপুর ও বালিজুড়ি ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। ওই বরাদ্দ থেকে রাজাই প্রেসবিটারিয়ান গীর্জা উন্নয়নে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ধর্মপাশা উপজেলায় ৫৫ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে বাঙ্গালভিটা গীর্জা উন্নয়নে মাত্র ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই উপজেলার উত্তরবংশিকু-া ইউনিয়নেই আড়াই হাজার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১৮ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এক টাকাও তাদের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ ছিল না। সদর উপজেলায় ৩২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও এই বরাদ্দ থেকেও কিছু পায়নি এই উপজেলার সীমান্তে বসবাসকারী হাজারো আদিবাসী। এই সময়ে ছাতক উপজেলায় ৬৭ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও আদিবাসীদের জন্য কোন প্রকল্প ছিলনা। এই অর্থ বছরে জেলা প্রশাসক অনুকূলে টিআর (সাধারণ) এর আরো প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসলেও আদিবাসীর উন্নয়নে ছিলনা কোন প্রকল্প। ওই অর্থ বছরে কাবিটা (সাধারণ) প্রকল্পে ৩৯ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল জেলা প্রশাসকের অনুকূলে। আদিবাসীদের ব্যক্তি, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে একটি প্রকল্পও ছিলনা এই বরাদ্দের বিপরীতে।
কাবিটা সাধারণ প্রকল্পে সদর উপজেলায় ৫৩ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকার মধ্যেও তাদের জন্য কোন বরাদ্দ ছিলনা। ছাতকে ৬১ লক্ষ ৮৫ হাজার ও দোয়ারায় ৪৮ লক্ষ ১৫ হাজার, ধর্মপাশায় ৫৭ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকার বরাদ্দের প্রকল্পে আদিবাসীদের জন্য একটিও প্রকল্প ছিলনা। তবে ওই সময়ে তাহিরপুর উপজেলার রাজাই হাজংপাড়া মন্দিরে একটি সাধারণ সোলার প্যানেল স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ থেকে। এই অর্থ বছরে টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ের উপ-বরাদ্দ জেলা প্রশাসক অনুকূলে এসেছে ১৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা। এখানেও কোন প্রকল্প ছিলনা। দ্বিতীয় পর্যায়ের টিআর (নির্বাচনী) বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার বরাদ্দে কোন প্রকল্প নেই আদিবাসীদের জন্য। সদর উপজেলার ২৮ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে কাটালবাড়ির ‘পোবিয়ান সাংমা’ নামে জনৈক ব্যক্তি ২০ ওয়াটের একটি সৌর প্যানেল সহায়তার তালিকায় নাম দেখা গেছে। তবে এখনো তিনি এই সহায়তা পাননি। টিআর বিশেষ বরাদ্দের দোয়ারাবাজার উপজেলার ৪০ লক্ষ ৯৬ হাজার, ছাতক উপজেলা ৪৫ লক্ষ ২ হাজার, তাহিরপুর উপজেলার ২৭ লক্ষ ৯৮ হাজার এবং ধর্মপাশা উপজেলার ৩৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দের মধ্যে আদিবাসীদের জন্য সহায়তামূলক কোন প্রকল্প ছিল না। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা সংসদের জন্য কাবিটা প্রথম পর্যায়ে বিশ্বম্ভরপুরে ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার, সদর উপজেলায় ২১ লক্ষ ৪৬ হাজার এবং টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু আদিবাসীদের জন্য একটি প্রকল্পও ছিল না। শুধু বিশেষ ও সাধারণ প্রকল্পেই নয় উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে সহায়তা চোখে পড়েনা।
ধর্মপাশার বাসিন্দা উন্নয়নকর্মী ইলিমেন্ট হাজং বলেন, শুধু উন্নয়ন-অবকঠামো-সহায়তা থেকে আমরা বঞ্চিতই নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অংশিদারিত্ব ও মতামত প্রদানের জন্য যে দাবি জানিয়ে আসছি তারও সুযোগ দেওয়া হয়না আমাদের। আমাদের এলাকার বাঙালি অধ্যুষিত জনপদে যে পরিমাণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সহায়তা প্রদান করা হয় তার বিন্দু পরিমাণও আমরা পাইনা। আমরা যুগ যুগ ধরে এভাবে রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও বঞ্চিত হচ্ছি।
সুনামগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা উইক্লিব সিম যুবসংঘের সভাপতি এন্ড্রু সলোমার বলেন, আমি সারাদেশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমাদের বঞ্চনা-বৈষম্যের কথা তুলে ধরি। তারপরও আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, টিআর-কাবিটা প্রকল্পে আমাদের এলাকায় অনেকের ঘরে সৌর প্যানেল দেখি। কিন্তু আমাদের অনেক হতদরিদ্র আদিবাসীরা তা পাননা।
সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনট-এর সাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা শঙ্কর মারাক বলেন, শুধু উন্নয়ন-অবকাঠামো-সহায়তা প্রকল্পই নয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নে যে সহায়তা দেওয়া হয় তাও যথাযথভাবে আমাদের সন্তানরা পায়না। এই প্রকল্পের বরাদ্দেও যথেষ্ট অনিয়মের অভিযোগ আছে ভুক্তভোগীদের।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া সুলতানা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্প থেকে প্রতিবছরই কিছু বরাদ্দ আসে। এটা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিশেষ প্রকল্পে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য কয়েকটি প্রকল্প এ জেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে তাদের সন্তানদের সহায়তা দেওয়া হয়। তাছাড়া টিআর কাবিটা জনপ্রতিনিধিরা বণ্টন করেন। তারাই কোথায় কারা প্রকল্প পাবে নির্ধারণ করেন।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার সমতল ও পাহাড়ে কিছু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। আমার বরাদ্দ থেকে তাদের জন্য প্রকল্প নেই। সমাজসেবা থেকে তাদেরকে নগদ সহায়তা দিয়ে থাকি। তাছাড়া সাংস্কৃতিকভাবে তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে আমি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com