সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের কৃষক ও জেলেরা ভালো নেই। চৈত্র মাসে অসময়ের ঢলে একমাত্র ফসল হারানোর পর সচ্ছল-অসচ্ছল কৃষকসহ হাওরের অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষেরই একই অবস্থা। তবে প্রত্যন্ত এলাকার কৃষক-মৎস্যজীবীরা হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পদে পদে হয়রানি হচ্ছেন।
জেলায় সাড়ে ৩ লাখ কৃষক ও ৮৪ হাজার ৪০০ মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছে। এই পরিবার সমূহের মধ্যে ফসলহারানোর পর দেড় লাখ কৃষক পরিবার ও কিছু মৎস্যজীবী পরিবার তিন মাসের সরকারি প্রণোদনা পেয়েছে। এই প্রণোদনা নিয়ে পরিবার চালানো কঠিন হলেও তারা স্বপ্ন দেখছিল উন্মুক্ত হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এই কঠিন সময় পার করবে। কিন্তু ইজারাদার ও মৎস্য অফিসের অভিযানের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া মাছধরার এলাকা নির্ধারণ করে না দেওয়ায়ও এই মওসুমে মাছ ধরতে গিয়ে হয়রানির পাশাপাশি জাল ও নৌকা খোয়াতে হচ্ছে তাদের।
জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, এ মওসুমে মা মাছ না মারার জন্য আমাদের অভিযান চলছে। তবে এবার অভিযান অনেকটা শিথিল। তাছাড়া ইজারাদাররাও যাতে এবছর মৎস্যজীবীদের হয়রানি না করে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা রয়েছে। এবছর ইজারাহীন জলাশয়গুলোতে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
গত মাসেও মৎস্যজীবীরা তাদের পার্শ্ববর্তী বিলের পাশে মাছ ধরতে গেলে ইজারাদার তাদের জাল ও নৌকা ধরে নিয়ে যায়। অনেককে নির্যাতনও করে। এভাবে হাওরের প্রতিটি জলমহালেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে।
এবছর আনন্দ নয় জীবিকার তাগিদেই বাধ্য হয়ে হাওরে মাছ ধরতে নামে মৎস্যজীবীরা। হাওরে নামতে গিয়ে মৎস্য বিভাগ এবং ইজারাদারদের বাধার মুখে পড়েন তারা। কোথায় মাছ ধরতে হবে সেই সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি এখনও। কিন্তু মাছ ধরতে আবার বাধা দেয়া হয়। এখন কিভাবে এই নিদানের দিন পাড়ি দেবে তারা?
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এই মাসে। কিভাবে আগামী দিন পাড়ি দেবে এমন প্রশ্ন হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের মনে। আগামী বোরো মওসুম পর্যন্ত কিভাবে তারা এই কঠিন সময় পাড়ি দিবেন সেটা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখছেন। কৃষক ও মৎস্যজীবীরা সরকারি সহায়তা ও ঋণের দাবি তাদের।
আমরা আশাকরি হাওরপাড়ের কৃষক-মৎস্যজীবীদের জীবিকা নির্বাহে উন্মুক্ত জলমহালে মাছ ধরার সুযোগ দিতে হবে এবং সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত রাখার জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে।