স্টাফ রিপোর্টার ::
আগামী ১ মে থেকে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সহায়তা কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রোববার সচিবালয়ের নিজ দপ্তরের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সুনামগঞ্জের ৮৬ শতাংশ মানুষের ফসল নষ্ট হয়েছে। ওই এলাকার মানুষের চাহিদা ছিল তিন থেকে ছয় মাস খাদ্য দিয়ে সহায়তা করার। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা বলেছি, ওই এলাকার মানুষ যত দিন না স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, বা পরবর্তী ফসল না পাবে, ততদিন সহায়তা চলবে। এছাড়া ওএমএস ও ভিজিএফের মাধ্যমে চাল দেয়ার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এর সুবিধা পাবে হাওয়ার এলাকার সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
জেলা অনুযায়ী চাল ও অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা তুলে ধরা হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে। সিলেটে ৪২৮ মেট্রিক টন চাল ও ২৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দেয়া হবে ৫০ হাজার পরিবারকে। সুনামগঞ্জে ১০৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৭৫ লাখ টাকা পাবে ১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। হবিগঞ্জে ২৯ হাজার পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৩০৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ টাকা। মৌলভীবাজারের জন্য বরাদ্দ ৩৪৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা পাবে ১ হাজার পরিবার। কিশোরগঞ্জে ৫৫২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ ৫০ হাজার পরিবারের জন্য। নেত্রকোনায় ৪৪৮ মেট্রিক টন চাল ও ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবে ৫০ হাজার পরিবার।
ত্রাণমন্ত্রী জানান, হওয়ার এলাকার মানুষের সমস্যা ও সমাধান খুঁজতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। আর সব মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হলেন কমিটির সদস্য। এই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাওর এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে।
অন্যদিকে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজজামান, সভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ, পুলিশ সুপার বরকতুল্লা খান, জেলা কৃষি অফিসার মো. জাহেদুল হক, জেলা মৎস্য অফিসার শংকর রঞ্জন দাশসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, শেষমেষ আমাদের শনির হাওরও তলিয়ে গেছে। এই দুর্যোগে সবাই কাজে একত্রিত হয়ে করতে হবে। ওএমএস ও ভিজিএফ’র চাল যেন নির্বিঘেœ সকলের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি সচিব সাহেবকে বলেছি এ এলাকায় যেন আটা না দেওয়া হয়। আটা খেয়ে কৃষকের কিছু হয় না। তাই আমি আটার বদলে চাল দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। সুনামগঞ্জে এবার হাওরে মাছ মরেছে অনেক। পরিমাণের আনুমানিক ৫০ টনের মতো মাছ আমরা হারিয়েছি। তাছাড়া জগন্নাথপুরে প্রচুর হাঁস মরেছে। সবকিছু মিলিয়ে কৃষকদের জন্য একটা খারাপ সময় যাচ্ছে।
তিনি সবাইকে নির্দেশ দেন হাওর পাড়ের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর। মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন, হাওরে যে সকল মাছ মারা গেছে সেগুলো উত্তোলন করে মাটি চাপা দেওয়ার। তিনি বলেন, কোনোভাবে মাছগুলো বাহিরে বা বাজারে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা কৃষকদের পরবর্তী সময়ের জন্য তৈরি করুন। আউশ চাষের প্রতি কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করুন।
হাঁস প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তার উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, আপনি ফার্মে বসে না থেকে হাওরের যান। সেখানে গিয়ে দেখুন সমস্যাগুলো। হাঁসের চিকিৎসার জন্য ভ্যাকসিন ও যত রকমের ঔষধ প্রয়োজন তা পাঠান ও যদি আরো প্রয়োজন হয় আপনারা তাদের চিঠি দেন। প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়নে মেডিকেল টিম তৈরি রাখা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধের মজুদ রাখার জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। যা আমাদের জন্য ভালো সংবাদ। বর্তমানে আমরা ছোটখাটো হাওরগুলোতে মাছ ধরা কিছুদিনের জন্য বন্ধ রেখেছি।