বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির নির্মাতা তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে অনেক কিছু। সেই শিক্ষা যারা নিতে চায় না, তারা হতভাগ্য এবং তারা অন্ধকারের কূপে আলোর মুখ দেখে না। তাদের অতীত আছে, কিন্তু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের বাঙালির রয়েছে গৌরবের অতীত।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজনীতির বহু শিক্ষার উপাদান। এই ভাষণে থেকে আমরা নানা পাঠ নিতে পারি। পাকিস্তানি জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ছিল বেঈমান। ১ মার্চ এক ঘোষণায় ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য তৎকালীন জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। ওইদিন সারা পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির একটি প্রস্তুতিমূলক সভা হচ্ছিল হোটেল পূর্বাণীতে। বঙ্গবন্ধু এমন ঘোষণা শোনার সাথে সাথে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি তখন বলতে থাকেন ‘জাতীয় সংসদের স্থগিতের ঘোষণা এক সুদীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি। একটি মাইনোরিটি দলের একগুয়ে দাবির কারণে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মূলতবি ঘোষিত হয়েছে। জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, তাই আমরা একে বিনাচ্যালেঞ্জ ছেড়ে দিতে পারি না।’
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় জনসভায় বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণকে যে বার্তা দেন তা হলোÑ ‘আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
৭ মার্চ থেকে বাঙালির মধ্যে একটি ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি হয়। দেশ চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় সংহতি। সর্বক্ষেত্রে, সবার মধ্যে জন্ম নেয় স্বাধিকার বোধের। সেদিনের পুরো ভাষণই ছিল বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আর মুক্তির কথা।
শতাব্দীর পর শতাব্দী অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত বাংলার মানুষ। তারা চেয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার। সেদিনের ৭ মার্চের বার্তা হলো অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। আর তাই শেষ পর্যন্ত হল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা লাভ করি কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। সেই ৭ মার্চের ভাষণ থেকে দেশ উন্নয়নে আমাদের আরো শিক্ষা নিতে হবে। বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। এই তো আমাদের প্রত্যাশা।