বাংলাদেশ সংবিধান ১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করিবেন এবং বিশেষত আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশে ওষুধের ট্রায়াল নিয়ে বিরাজ করছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ওষুধ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার আগে কার্যকারিতা পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে ওষুধ বাজারজাতের আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া হয় না। ৯০০টি প্রতিষ্ঠান ২২ হাজার ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে প্রায় ১ হাজার ২০০টি জেনেটিক নামে ঔষুধ বাজারজাত করছে।
মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির সব ধরনের ওষুধ এবং ১৪টি কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন দেশের উচ্চ আদালত।
এসব কোম্পানিগুলোর ওষুধ জীবন রক্ষার নামে জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষ সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সে ওষুধ যদি মানহীন হয়, তবে সুস্থতার বিষয়টি অনিশ্চিতই শুধু নয়, জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সংসদীয় কমিটি মানহীন ওষুধ তৈরির জন্য ৩৪টি ওষুধ কোম্পানিকে চিহ্নিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা সত্ত্বেও তারা নানা কৌশলে সে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলছিল। উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তাদের সে অপকৌশল লাগাম পরানো হয়েছে।
মানহীন ওষুধ উৎপাদনের জন্য ৩৪টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হলেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক এবং এগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের থেকে মুক্তি পেতে হলে ওষুধ কোম্পানির বদলে ওষুধ প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা যে দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকায় বেতন-ভাতা পান তাদের স্বার্থ রক্ষায় যতœবান হতে হবে। এব্যাপারে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের ব্যাপক অগ্রগতি ঘটলেও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে যতটা কড়াকড়ি থাকা উচিত, সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
দেশে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে এটা যেমন সত্য তেমনি ভেজাল ওষুধেরও পরিমাণ কম নয়। আমরা আশা করি, মানুষ রোগ থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ সেবন করতে হয়, তা যেন কোনোভাবেই ভেজাল মিশ্রিত না হয়। সেদিক থেকে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।