জেলার সকল হাওরের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত বেড়ি বাঁধ নির্মাণের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। হাওরপাড়ের কৃষক ও সাধারণ মানুষ চান, অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্তভাবে দ্রুত বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হোক। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদের ঝড় উঠার পরও দ্রুততার সাথে বেড়ি বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা হচ্ছে না। বরং আজ বেড়ি বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের বাসা-বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনেও বেড়ি বাঁধ নির্মাণে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেছেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-১ আসন হাওরবেষ্টিত অঞ্চল। এই এলাকার মানুষের একমাত্র জীবিকার উৎস হচ্ছে ধান। এই সোনালী ফসল যদি কৃষক সময়মত ঘরে তুলতে না পারে, জনগণের অভাব অনটনে জীবন যাপন করতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হাওরের স্থায়ী বেড়ি বাঁধের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কৃষকের সোনার ফসল ঘরে তুলতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আর এই বেড়ি বাঁধের কাজ সময়মত না হলে কৃষকের সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিকাংশ বেড়ি বাঁধের কাজ একটি লুটেরা সিন্ডিকেট ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে। যথাযথভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার হাওরগুলো এখন পর্যন্ত হুমকির সম্মুখীন। অধিকাংশ হাওরের এখনও কোন বাঁধের কাজ হয়নি। প্রতিটি হাওর এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ইতিমধ্যে ভাটি অঞ্চলের একটি বড় হাওর চন্দ্র সোনার থাল মেঘালয় থেকে আসা আগাম পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে।
হাওরপাড়ের মানুষের কান্না কত যে বেদনাদায়ক তা না স্বচক্ষে না দেখলে বুঝে উঠা মুশকিল। যারা আজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সমস্ত কাজ হাতিয়ে নিয়েছে, তারা হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের অংশ। তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
ইতিমধ্যে হাওরের বাঁধের কাজ নিয়ে প্রতিবাদ উঠেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য, কিন্তু এখন পর্যন্ত হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ কোন রকমের সম্ভাবনা নেই। কারণ যারা ঠিকাদার তাদের নাকি অনেক শক্তি। তাদের হাত অনেক লম্বা। এই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষককারীরা ইর্ষান্বিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
এই বাঁধ নির্মাণে প্রতিবাদ করায় গত ২ মার্চ সন্ধ্যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পৌর শহর মল্লিকপুরের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটায়। এসময় সাংসদ বাসভবনে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
এ প্রসঙ্গে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনও বলেছেন ‘এই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা, যারা আজ বিভিন্ন লেবাস লাগিয়ে ঘুরছে, কালো টাকার মালিক এরা। আমাকে মেরে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। আমার অপরাধ আমি উন্নয়নমূলক কাজের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।’
হাওরের ফসলকে রক্ষা করতে হবে, হাওরবাসীকে বাঁচাতে হবে। তাই অতি দ্রুত দুর্নীতিমুক্ত বেড়ি বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে জেলার মানুষ নিরাপদে বোরো ফসল ঘরে তোলতে পারেন। এই ফসল ঘরে তোলতে পারলে কৃষক ও সাধারণ মানুষ তাঁদের দৈনন্দিনের খরচ মেটাতে পারবে, ঋণগ্রস্তরা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারবে, স্বস্তিতে একটি বছর কাটাতে পারবে। অনাহারে আর থাকতে হবে না কৃষক ও সাধারণ মানুষ। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই জেলাবাসীর প্রত্যাশা।