সাম্প্রদায়িকতা একটি বিষধর সাপ। বিশ্বের অনেক দেশই এই বিষবাষ্পে আক্রান্ত। সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ায় বিভিন্নভাবে। কিন্তু এবার দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ায় যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। গত বছর ৮ এপ্রিল হেফাজতের ২১ কেন্দ্রীয় নেতা যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, বর্তমান স্কুল পাঠ্যপুস্তক মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দু তত্ত্বের পাঠ দেওয়া হয়ে থাকে। এই অভিযোগ এনে তাঁরা ১৭টি লেখা বাতিল এবং ১২টি লেখা যুক্ত করতে বলেছিলেন। তাদের অনেক দাবি মেনে নিয়ে এই বছরের পাঠ্যপুস্তক প্রণীত করেছিলেন। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য বই ছাপা হওয়ার পর জাতীয় পাঠ্যক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) নজরে আসে যে হেফাজতের দাবি অনুসারে দু’টি লেখা এখনো বাদ পড়েনি। ততদিনে প্রায় ১৫ লাখ বই ছাপা হয়ে গেছে। পরে সেগুলো বাতিল করে হেফাজতের দাবির একশত ভাগ মেনে নতুন করে ছাপানো হয়। এ জন্য হেফাজত সন্তোষ প্রকাশ করে। অনেকে সন্তুষ্ট হলেও আমরা উদ্বিগ্ন।
পাঠ্যপুস্তকে এই পরিবর্তন ও সাম্প্রদায়িকীকরণ কীভাবে হলো, কারা এই কাজ করলেন, কার হুকুমে হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। গত ১৯ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক রচনায় দায়প্রাপ্ত ১৩ জন সংকলক ও সম্পাদক যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন পাঠ্য পুস্তকের এসব পরিবর্তন সম্পর্কে তাঁরা অবগত নন। পরিবর্তন সম্পর্কে সংকলক-সম্পাদকদের কিছুই জানানো হয়নি।
পাঠ্যপুস্তক কোনো লেখা বাদ দেওয়া বা যুক্ত করার জন্য জাতীয় পাঠ্যক্রম সমন্বয় কমিটির অনুমোদন এবং সম্পাদকের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সে কাজটি সম্পাদকের অজ্ঞাতেই রয়ে গেল।
এ অবস্থায় শিক্ষাকে অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন ও বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে। তাই শিক্ষাকে সার্বজনীন বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে হবে এবং অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতা রোধ করতে হবে।