1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সরকারি বিদ্যালয় বন্দোবস্ত দিল ভূমি অফিস!

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ মে, ২০১৬

বিশেষ প্রতিনিধি ::
১৯৫৪ সনে সদর উপজেলার নারাইনপুর গ্রামে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সরকার। দেশ স্বাধীন হবার পরে সারাদেশের ন্যায় অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টিও সরকারিকরণ হয়। সরকারি রেকর্ডপত্রে এরপর থেকে বিদ্যালয়টি ‘৪৩নং নারাইনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে স্বীকৃত।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ক্লাসদান, দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি নিজের নামে জায়গা বুঝে পায়নি। চোখের সামনে বিদ্যালয়টির সবরকম অস্তিত্ব থাকার পরও সম্প্রতি এই বিদ্যালয়ের মালিনাকানাধীন ভূমি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজদের কারণে একটি প্রভাবশালী মহল বন্দোবস্ত নিয়ে ফেলেছে। এই খবর জানাজানির ফলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর পক্ষে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। তাঁরা বিদ্যালয়টি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৫৪ সনে সদর উপজেলার উত্তর নারাইনপুর মৌজার ১৬৭ নং জেএলস্থ ১নং খতিয়ানের ১৩০নং দাগের প্রায় ৬৭ একর ভূমিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ৬৫ হাত দীর্ঘ একটি টিনশেড ভবন নির্মিত হয়। এই বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যায়ক্রমে ফাউন্ডেশনসহ দুটি ভবন ও আনুষঙ্গিক একাধিক স্থাপনা রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী মাঠে শিক্ষার্থীরা এসেম্বলিসহ নিয়মিত খেলাধুলা করে। বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করান।
লিখিত আবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যালয়কে সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার একাধিকবার আবেদন করলেও ভূমি অফিসের লোকজন বিদ্যালয়ের নামে ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করেনি। জানা গেছে, কয়েক বছর আগে গ্রামের মৃত আরফান উল্লার পুত্র তফাজ্জুল ও তার ভগ্নিপতি রাশিদ আলী ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয়ের ভূমি নিজেদের নামে বন্দোবস্ত নেন। সম্প্রতি সরকারি খতিয়ান থেকে বিদ্যালয়ের এই ভূমি খারিজ করে ৩০ ও ৩১ নং খতিয়ান নম্বরে তাদের নামে নামজারি সম্পন্ন হয়েছে।
একটি প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত সরকারি বিদ্যালয়টি বৈধভাবে কোন ভূমি ছাড়াই এখন ভূমিহীন অবস্থায় আছে। বন্দোবস্তকারীরা নানাভাবে বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়ার কথা সংশ্লিষ্টদের জানাচ্ছে বলে জানা গেছে। লিখিত আবেদন থেকে জানা গেছে, বন্দোবস্তগ্রহণকারীরা গত ৩ মে স্কুল ঘেঁষে স্থাপনা তৈরি করতে গেলে বন্দোবস্তের বিষয়টি নজরে আসে। বর্তমানে দখলবাজরা স্থাপনা তৈরি করে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ভূমি বিদ্যালয়ের নামে দেওয়া হয়নি বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ভূমিখেকো চক্র বন্দোবস্ত নেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে। স্থানীয় ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে তারা গোপনে নিজেদের নামে বন্দোবস্ত নিয়ে নেয়। সরকারি জমির বন্দোবস্ত নিয়মানুযায়ী সরেজমিন ভূমির প্রকৃত অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অফিসের লোকজন মোটা অংকের ঘুষ পেয়ে দ্রুত বিদ্যালয়ের ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করে। এ ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ ছয় দশকের একটি স্থাপনায় দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার হওয়ার পরও কিভাবে ভূমি অফিস বিদ্যালয়টির ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করলো এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। খোদ জেলা প্রশাসনেও এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করার পর জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করার বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত বন্দোবস্ত বাতিলের নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে যারা এই বন্দোবস্ত প্রদানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুপ্তি রাণী সরকার বলেন, সরকারি রেকর্ডপত্রে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি সরকারি হিস্বে স্বীকৃত। বিদ্যালয়ের নামে ওই ভূমিতে একাধিক স্থাপনাও রয়েছে। এরপরও কিভাবে বিদ্যালয়ের ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হলো বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। এই ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আমির হোসেন বলেন, সরকারিভাবে সবধরনের স্বীকৃতি থাকার পরও কিভাবে বিদ্যালয়টির স্থান বন্দোবস্ত দেওয়া হলো এটা বিস্ময়ের বিষয়। এই কাজে বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে। আমরা অবিলম্বে ভূমি দস্যুদের হাত থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য প্রশাসনের প্রতি লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, লিখিত আবেদন পাওয়ার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)কে বলেছি। বিদ্যালয়ের ভূমি যাদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে সেটা বাতিল করে যারা বন্দোবস্ত প্রদানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com