1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি : মনীষাপ্রসূত বিপ্লবী মার্কস

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০১৬

এনামুল কবির ::
কার্ল মার্কস ছিলেন সহ¯্রাব্দের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ; মনীষাপ্রসূত এক বিপ্লবী। তত্ত্ববিশ্বে তাঁর এই প্রভাব অতিক্রমনীয়- এতে সন্দেহ নেই। সহৃদয়চিত্ত এই বিপ্লবী ভাবুকের জন্ম হয় ১৮১৮ সালে, ৫ মে; জার্মানি তথা প্রুশিয়ার রাইন অঞ্চল-ট্রিয়ার শহরে। রাইনের এই বাম উপকূল এক সময় যুক্ত হয়ে পড়েছিল ফ্রান্সের সঙ্গে। ফ্রান্সের জন্য এই সময়টা ছিল তখন সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার; বিপ্লবের প্রস্তুতিপর্বের সঙ্গে তুলনীয় যেমন, একই সাথে সেটা ছিল তেমনি আলোকায়নেরও যুগ। পরবর্তীতে এই রাইন ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ন সা¤্রাজ্যের পতনের মধ্যদিয়ে আবার প্রুশিয়ার হাতে আসলে আলোকায়নের সেই প্রভাব কিন্তু থেকেই যায়। আলোকায়নের এই প্রভাব ও এর সারগ্রাহী উত্তরাধিকারের মধ্যেই জন্ম হয় বিপ্লবী এই মনীষী-কার্ল মার্কসের।
কার্ল মার্কসের পিতা হেনরিখ মার্কস ছিলেন ফরাসি এই আলোকায়ন পর্বের সন্তান; পূজারি তো বটেই, সেই সাথে এই ভাবাদর্শেরও একজন নিবিষ্ট অনুরাগী। বাস্তবিক কারণেই তখন গৃহের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়তো তাঁর সেই অনুরাগের ছাপ। এই ছাপের অর্থ হলো ব্যক্তিগত প্রতিটি পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে আলোকায়নের সেই বুদ্ধিমত্ত্বাকে অন্বেষণ করা। শুধু তাই নয়, হেনরিখের কাছে এই প্রভাব ছিল এমনই- ট্রিয়ারের দিনগুলোতে যা থাকে প্ররোচিত করতো নিরেট একজন ফরাসি ভদ্রলোক হয়ে উঠতে। তখন আইনজীবী পিতা হেনরিখের সঙ্গে মার্কসের মা হেনরিয়েটা ছিলেন রীতিমতো বড়সড় এই পরিবারের একজন দক্ষ ম্যানেজার। রুচিশীল এই আলোকিত দাম্পতির সন্তানাদির মধ্যে ছিল চার পুত্র ও পাঁচ কন্যা। বড় ছেলে ডেভিডের মৃত্যু হলে তাঁদের এই পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র হয়ে উঠেন ‘কার্ল’- কার্ল মার্কস; ‘পিতা-মাতার আশা-ভরসা ও প্রিয়পাত্র।’ (কার্ল মার্কস, সংক্ষিপ্ত জীবনী, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো।)
এখানে বেড়ে ওঠার এই সময়কাল জুড়ে পিতা হেনরিখের প্রভাব যতটা না ছিল, তারচেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না তাঁর স্কুলের সহপাঠী বন্ধু এডগার আর বোন সোফিয়ার বান্ধবী- জেনির পিতা ল্যুডভিগ ভন ভস্টফালেনের প্রভাব। মার্কসদের এ পরিবারটি তখন সমৃদ্ধ ও সংস্কৃতবান ছিল- সন্দেহ নেই; কিন্তু বিপ্লবী ছিল না। অপরদিকে ভস্টফালেনের পরিবার ছিল যুগপৎভাবে সমান সমৃদ্ধ ও অধিক অগ্রসর এবং অবশ্যই বিপ্লবী পরিবার। এই ভস্টফালেন পরিবারে মার্কসের যাওয়া-আসার সুবাদে তখন ছোট মার্কস আর বুড়োও পরবর্তীতে তাঁর শ্বশুর ল্যুডভিগ এর মধ্যে গড়ে ওঠেছিল বুদ্ধিবৃত্তিক এক সম্পর্ক। এই সম্পর্কসূত্রই মার্কসের সামনে প্রথমবারের মতো দ্বারোদ্ঘাটন ও পরিচয় করিয়ে দেয় ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রী তথা সাঁ সিঁমোর রচনাবলির সঙ্গে বস্তুত এখান থেকেই নির্দিষ্ট হয়ে যায় মার্কসের মানবিক বিশ্ব রচনার লক্ষ্য।
মার্কস ট্রিয়ারের মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করেন ১৮৩০ থেকে ১৮৩৫ পর্যন্ত; তারপর বন থেকে তিনি যান বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই মার্কস পড়েন আইনশাস্ত্র; ‘কিন্তু বিশেষ করে অধ্যয়ন করেন ইতিহাস ও দর্শন। এপিকিউরাসের দর্শন সম্পর্কে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়-থিসিস পেশ করে ১৮৪১ এ তিনি পাঠ সাঙ্গ করেন। দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে মার্কস তখনও ছিলেন হেগেলপন্থী ভাববাদী। বার্লিনে তিনি ‘বামপন্থী হেগেলবাদী’ (ব্রুনো বাউয়ের প্রভৃতি) গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। হেগেলের দর্শন থেকে এঁরা নাস্তিক ও বিপ্লবী সিদ্ধান্ত টানার চেষ্টা করতেন।’ লেলিন, মাকর্সবাদ, লেলিন রচনাবলি-১।) মার্কস নিজে মার্কসবাদী না হলেও এর তিনটি উৎসের মধ্যে এটি বিবেচিত হয় ১৯ শতকের এই জার্মান দর্শন; বাকি- ইংরেজ অর্থশাস্ত্র আর ফরাসি সমাজতন্ত্রের যুগপৎ সমন্বয়েই সৃষ্টি করে চলে মানবজাতির ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকার- মানে মার্কসবাদের পথ।
এখানেই সংগ্রথিত হয় মার্কসের তাবৎ প্রতিভা; তাঁর এই মতবাদ বা ভাবাদর্শের বিশ্লেষণ পদ্ধতি একই সাথে ব্যাখ্যা করে শাসক ও শোষকের নিজস্ব শ্রেণিচরিত্র। বাস্তবিকই মার্কসীয় অর্থনীতি তখন মার্কসের নিজের মতো উদ্ভাবন করে চলে উদ্বৃত্তমূল্য তত্ত্ব; ব্যাখ্যা করে পুঁজিপতি ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্ককে। শ্রমিকশ্রেণি কিভাবে পিষ্ট হয় আর ধ্বংস হয় ক্ষুদে মালিকরা এবং সেই সাথে পুঁজিপতি কিভাবে রচনা করে চলে বেকার বাহিনী সৃষ্টিপূর্বক এর হাহাকারের অর্থনীতি। তাই মানবিক বিশ্বে মার্কসের রচনা নিজেই হয়ে উঠে প্রতিরোধের দর্শন বিশেষ এক অস্ত্র; যেখানে বৈষম্য-বর্তমান আর পুঁজির শোষণ অপ্রতিহত- এই মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষার দায়িত্ব হলো সেখানে বিপ্লবী চিন্তার মধ্যদিয়ে বিপ্লবী কীর্তি আর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
তাই বোধগম্য কারণেই বিচাররীতি হিসাবে মার্কসবাদের তুলনা হয় না। এই মার্কসবাদ হলো মার্কসীয় রচনার সেই সারসংক্ষেপ যা সতীর্থ এঙ্গেলসের সঙ্গে মার্কস নিজেই একদিন রচনা করেছিলেন। আত্মমুক্তির ইতিহাসে এই মার্কসবাদ তেমন হয়ে ওঠে বিপ্লবের তত্ত্ববিশেষ, তেমনি হয়ে ওঠে প্রতিরোধেরও একটা শাস্ত্রীয় পাঠ বা বিজ্ঞানের একটা দর্শন। এই দর্শনচিত্র ছাড়াই শ্রমজীবী ব্যক্তিরা যখন অনুভব করে শোষণ ও পীড়ন থেকে মুক্তির, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ ছাড়া তখন আর কিছুই ভাবা যায় না। সংকট থেকে বিকাশ ঘটে এর সমাধানসূত্রের; একইভাবে পুঁজির দৈত্য আর শোষণের চিত্র পথ দেখায় এর দাওয়াইয়ের- মার্কসীয় বিশ্লেষণের; মানবিক অর্থনীতি ও বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক তত্ত্বের। মার্কসের কৃতিত্ব হলো সাঁ সিঁমোর ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রের বিপরীতে বৈজ্ঞানিক এই সমাজতন্ত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিৎ প্রতিষ্ঠা করা। অবশেষে সমাধান হলো ইতিহাসের সচেতন ধাঁধাঁর।
মার্কস শুধু বিপ্লবী ভাবুকই ছিলেন না; সমাজ পরিবর্তনে তিনি ছিলেন এই দর্শনের একজন ব্যবহারিক প্রতিষ্ঠাতাও। ফয়েরবাখ সম্পর্কে ১১ নম্বর থিসিসে মার্কস সেটা এভাবেই সূত্রবদ্ধ করেছেন: ‘এতোদিন দার্শনিকেরা পৃথিবীকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন; তবে আসল কাজ হলো একে পরিবর্তন করা।’ মার্কস ছিলেন মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নিরাপোষ এক দরদিহৃদয়; এবার তাঁর রচনাসমূহের সযতœপাঠই হবে তাঁর প্রতি আমাদের যথাযথ শ্রদ্ধার প্রকাশ। মনীষী ও বিপ্লবী এই মার্কসের আজ ১৯৮তম জন্মবার্ষিকী; এই দিনে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা।
[লেখক : প্রভাষক, শাহজালাল মহাবিদ্যালয়, জগন্নাথপুর]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com