স্টাফ রিপোর্টার ::
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরের রামদিঘা গ্রামের ট্র্যাজেডি ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনকে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। ৩৬ ঘণ্টা পেরোলেও এ ঘটনায় কোন মামলা না হওয়ায় নির্দেশ দেয়া হয়। তবে মধ্যনগর থানার ওসি জানিয়েছেন, মামলা করতে বাদী পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, পল্লী বিদ্যুতের টানানো তার ছিঁড়ে একই পরিবারের চারজন মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলা করতে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী ও মধ্যনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মধ্যনগর থানাধীন চামরদানী ইউনিয়নের হাওর এলাকার রামদিঘা গ্রামে কিছুদিন আগে নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে ওই গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া হয়। এ কাজের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নি¤œমানের মালামাল ও পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সঠিকভাবে এটি রক্ষণাবেক্ষণ না করায় স্থানীয় এলাকাবাসী নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানালেও এ নিয়ে তখন তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। ওই গ্রামের দরিদ্র কৃষক রঞ্জিত চন্দ্র সরকার (৪৫) গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে নিজ বাড়ির উঠানে বসে একটি থালায় করে মুড়ি খাচ্ছিলেন। এ সময় তার নিজ বাড়ির উঠানের উপর দিয়ে টানানো পল্লী বিদ্যুতের তার ছিটকে তার উপর পড়লে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ সময় তাকে বাঁচাতে স্ত্রী রিতা রানী সরকার (৩৫), রঞ্জিতের বড় ভাই রাকেশ সরকারের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনালী রানী সরকার (১০) ও রঞ্জিতের বাবা জগদীশ চন্দ্র সরকার (৭০) এগিয়ে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সেদিন সন্ধ্যায় হতদরিদ্র পরিবারের এই নিহতদের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহ করা হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহ করতে গরিব এই পরিবারের স্বজনসহ আশপাশের লোকজনদের উৎসাহিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্র রঞ্জিতের পরিবারে বেঁচে আছেন তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও তার বৃদ্ধা মা।
এলাকাবাসীর অভিযাগ, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি গত ৮ এপ্রিল এই বাড়ির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার টানিয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়। তাদের টানানো তার কয়েকদিনের মধ্যেই ছিঁড়ে পড়ে। পল্লী বিদ্যুতের অবহেলা, অনিয়ম না থাকলে ১৮ দিনের মাথায় কিভাবে তার ছিঁড়ে পড়ে। এলাকাবাসী পল্লীবিদ্যুতের এই তার টানানোর সাথে জড়িত কর্মকর্তা, ঠিকাদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেয়েছি। মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছি মামলা করতে।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কোন অপমৃত্যু মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি। বাদী পাওয়া যাচ্ছেনা।