‘আজ থেকে শহরে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ’। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের শিরোনাম ছিল, ‘পৌরসভার ঘোষণা আজ থেকে শহরে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ’। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে আজ রবিবার থেকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ভেতরে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চলাচল বন্ধ থাকবে।’
যানবাহন চলাচলেও আইন আছে। যান প্রচলন, সেটা নিয়ে ব্যবসা করা, সেটার কারখানা খোলা, সেটার দ্বারা জীবিকা নির্বাহ এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আইন। ইজিবাইকের প্রচলন ও ব্যবসা একেবারে পুরনো কীছু নয়। কম করে হলেও এক দশকের মতো। কিন্তু ইজিবাইকের কোনও আইন নেই। ট্রাফিক আইনের বাইরে থেকেই এতো দিন এই যানটি চলাচল করে এসেছে। সে-সময়টা প্রায় দশ বছরের মতো, খুব কম সময় নয়। এতো দিন সাধারণ মানুষ, ট্রাফিক পুলিশ, বিভিন্ন আইনি প্রশাসন সকলেই জান্তে কিংবা অজান্তে এই অবৈধ যানটিকে মেনে নিয়েছিলেন। রিকশার ব্যাপারে পৌরসভার একটা আইনি ব্যাপার-স্যাপার আছে। সে-পৌরসভার ভেতরেই এই বেআইনি যানটি চলাচল করেছে, পৌরপ্রশাসকরা সেটা চাক্ষুসও করেছেন। বেআইনি কাজ-কারবার সাধারণত চলে লুকিয়ে ছাপিয়ে, ইজিবাইক চলেছে প্রকাশ্য দিবালোকে আইন ও প্রশাসনের নাকের ডগায়। এট কী করে হয় আমাদের একবারেই বোধগম্য নয় এবং শেষ পর্যন্ত আদালত এর বিরুদ্ধে আইনি নির্দেশ জারি করেছেন।
ইজিবাইক-এর বিরুদ্ধে বেশ কীছু অভিযোগ আছে। এটি পথের ভিড় ও জট কেবল বাড়ায়ইনি বরং দুর্ঘটনা ঘটার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। ফলে পথচারীদের দুর্ঘটনায় পড়বার আশঙ্কা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল। দুয়েকটি দুর্ঘটনা যে ঘটেনি এমনও নয়। তাছাড়া এটির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরিরও একটি অভিযোগ আছে। আইনের বাইরে কীছু হোক সাধারণ মানুষের সেটা অনাকাক্সিক্ষত। তাঁরা আইন মেনে সব কীছু করতে চান। কিন্তু এ দেশের যারা আইন প্রণেতা, আইনের প্রয়োগকর্তা এককথায় আইনের ধারকবাহক তাঁদের রহস্যজনক নীরবতার ফাঁকফোঁকড় গলে মাঝে মাঝে ইজিবাইকের মতো বেআইনি ব্যবসার প্রচলন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ তা বুঝতেও পারেন না। এসব বিষয়ে, অর্থাৎ আইনবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে, সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
কিন্তু তারপরও একটি জরুরি কথা থেকে যায়। যাঁরা ইজিবাইক চালিয়ে তাঁদের জীবন ও সংসার চালান ইজিবাইক বন্ধ হওয়াতে তাঁরা বেকার হয়ে পড়বেন এবং সংসার চালানো তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। অচিরেই এই বিপদ থেকে এইসব বেকার ইজিবাইক চালকদের রক্ষার্থে, তাঁদের জীবন চালানোর একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার চিন্তা বোধ করি পরিহার করা সঙ্গত হবে না। সেটা ভাবতে হবে ও মানবিক কারণে বাস্তবায়ন করতে হবে।