1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭২ শতাংশই কৃষক

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। এদের ৭২ শতাংশই কৃষক। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে সরকারের পক্ষ থেকে তা দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এতে মৃত্যু থেমে নেই। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। বজ্রসহ বৃষ্টি আগামী ১১ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহওয়া অধিদপ্তর।
বজ্রপাত কখন হয় :
আন্তর্জাতিকভাবে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন ড. আশরাফ দেওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত বিকেল থেকে রাত এবং ভোররাত থেকে ভোর, এই সময়ে বজ্রপাত হয়ে থাকে। মূলত সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত হলো বজ্রপাতের আদর্শ সময়। সাধারণত পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব, উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে দেশে বজ্রমেঘগুলো প্রবেশ করে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, বজ্রমেঘ বাতাসে ভর করে প্রবাহিত হয়। তাই বাতাসের গতিবেগ যত থাকে ততবেগেই বজ্রমেঘগুলো প্রবাহিত হয়ে থাকে। সাধারণত দেশের বাইরে থেকে আমাদের দেশে বজ্রমেঘগুলো প্রবেশ করে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় নিয়ে থাকে।
দেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসে প্রায় ৫৯ শতাংশ, আর মৌসুমি বায়ু আসার সময়, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ বজ্রপাত হয়। তবে মোট বজ্রপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে আসার আগের দুই মাসে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বজ্রপাতের প্রকোপ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি হয়। বর্ষাকালে রাঙ্গামাটি, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রামে বজ্রপাত হয়। এ ছাড়া শীতকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট আর শীতের শেষে রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়।
তবে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আমাদের দেশের মধ্যাঞ্চলে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া পার্শ^বর্তী দেশের উষ্ণ আবহাওয়ার মেঘমালা আমাদের দেশে প্রবেশ করে পরিপক্বতা অর্জন করতে পারে। এর প্রভাবেও আমাদের এখানে বজ্রমেঘ তৈরি হয় এবং সেসব মেঘের কারণে বজ্রপাত হয়ে থাকে।
বজ্রপাতে কারা বেশি মারা পড়ছে :
খোলা আকাশের নিচে থাকলেই বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আর খোলা আকাশের নিচে থাকে আমাদের শ্রমজীবী মানুষ ও কৃষকরা। ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, আমাদের দেশে ভোরের দিকে দেশের হাওর (সিলেট, শ্রীমঙ্গল, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা) অঞ্চলের কৃষকরা মাঠে কাজ করতে যান। তখন ওই এলাকায় বজ্রপাতে কৃষকরা বেশি মারা যায়। এছাড়া মাছ ধরতে যারা বাইরে যায়, কিংবা সন্ধ্যার সময় কাজে বাইরে থাকে তারাই বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকেন।
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা, বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ, নদীর চর এলাকা, নদীর আইল বা সাগরের পাড় এলাকায় যেখানে উঁচু কোনো স্থাপনা বা বৃক্ষ নেই সেসব এলাকায় বজ্রপাতের সময় মানুষ থাকলে তারা মৃত্যুঝুঁকিতে থাকে।
বজ্রপাত কতক্ষণ স্থায়ী হয় :
বজ্রপাত মূলত ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আবুল কালাম মল্লিক বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, দেশে মূলত বর্ষার আগ মুহূর্তে বেশি বজ্রপাত হলেও মে মাসে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এ মাসে গড়ে ১৩টি বজ্রমেঘ সৃষ্টি হওয়ার কথা।
বজ্রপাতের ব্যাপ্তি প্রসঙ্গে এশিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, সব মেঘে বজ্রপাত হয় না। যে মেঘে বজ্রমেঘ রয়েছে সেসব মেঘ কোনো এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বজ্রপাত ঘটায়। সাধারণ বজ্রমেঘের যে সেলটি (একটি খন্ড) রয়েছে সেই সেলটি একটি এলাকা অতিক্রম করতে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নিয়ে থাকে। তাই কোনো এলাকায় বজ্রপাত শুরু হওয়ার পর ধরেই নিতে হবে তা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অব্যাহত থাকবে।
২০১৫ থেকে ২,৮৭২ জনের মৃত্যু :
২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ ঘোষণাতে মৃত্যুহারের সংখ্যায় কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। দেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এই বজ্রপাতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ) নিতাই চন্দ্র দে সরকার বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বজ্রপাতে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ২০১৬ সালে ৩৯১ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০১৭ সালে ৩৮৮ জনের। এ ছাড়া এ বছর এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মারা যাওয়াদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষক।
মৃত্যুহার কমানোর উপায় কি :
পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ৮০ লাখ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও বজ্রপাতে একসময় অনেক মানুষের মৃত্যু হতো। কিন্তু বজ্রনিরোধক খুঁটি বা পোল স্থাপন ও মানুষকে সচেতন করে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা হয়েছে। তাই বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমাতে বজ্রপাতের পূর্বাভাসকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমান প্রযুুক্তির কল্যাণে আমরা আগে থেকেই জানি কোন এলাকায় কোন সময় বজ্রপাত ঘটবে। অর্থাৎ কোনো এলাকার ওপর দিয়ে বজ্রমেঘ প্রবাহিত হবে কি না, তা কিন্তু বলা যায়।
এ বিষয়ে ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, আমরা রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে বজ্রপাতের আগাম ঘোষণাগুলো স্থানীয় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া, রেডিও, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন বিরতি কিংবা মিডিয়ায় ঘোষণার মাধ্যমে বজ্রপাতের সময় জানিয়ে দিতে পারি। এতে স্থানীয়রা সচেতন হয়ে বজ্রপাতের ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় ঘরে অবস্থান করবেন।
বজ্রপাত প্রতিরোধের জন্য আগেকার অনেক ভবনে বজ্রনিরোধক দন্ড ব্যবহৃত হতো। এখন এর ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে। এখনো নগরী বা দেশের পুরাতন ভবনগুলোর চূড়ায় ত্রিশুল আকারের তিনটি লোহার ফলা এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের মাধ্যমে তা মাটির নিচ পর্যন্ত সংযুক্ত রয়েছে। যা আর্থিং তার বলা হয়ে থাকে। আমরা ভবনগুলোতে এমন বজ্রনিরোধক দন্ড ব্যবহার করতে পারি। এ ছাড়া খোলা স্থানের বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা টাওয়ারে লাইটনিং অ্যারেস্টার (যাকে লাইটনিং আইসোলেটরও বলা হয়) বসাতে পারি। লাইটনিং অ্যারেস্টার হলো একটি যন্ত্র, মূলত একটি বৈদ্যুতিক তার এবং স্থলের মধ্যে একটি ব্যবধান, যা বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন এবং টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমের আস্তরণ এবং কন্ডাক্টরকে ক্ষতিকর থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
এ বিষয়ে নিতাই চন্দ্র দে সরকার বলেন, আমরা সারা দেশের ১৫টি জেলায় ৩৩৭টি লাইটনিং অ্যারেস্টার বসিয়েছি। এর ফলে ওই এলাকায় যেসব বজ্রপাত হবে সেসব বজ্রপাতকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হবে। নিতাই চন্দ্র সরকার বলেন, একেকটি লাইটনিং অ্যারেস্টার ১০০ বর্গমিটার এলাকা কভার করে। অর্থাৎ এ এলাকার মধ্যে কোনো বজ্রপাত হলে তা অ্যারেস্টারে আটকা পড়বে।
বায়ুদূষণে বেড়েছে বজ্রপাত :
ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, বজ্রপাত তার চরিত্র বদল করেছে। প্রথমত বছরের এ সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বজ্রপাত হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে অন্যত্র। আর এতে আমাদের গবেষণা উঠে এসেছে নতুন কিছু। তিনি বলেন, শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণের প্রভাব বেশি। আর এই দূষণের কারণে শহরাঞ্চলে বজ্রপাত হলেও তা ভবনের কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে না। কিন্তু ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নষ্ট হচ্ছে। আর মানুষ মারা যাচ্ছে শহরের বাইরের এলাকাগুলোতে। ওইসব এলাকায় উঁচু স্থাপনা বা গাছ না থাকায় মানুষ মারা যাচ্ছে। ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে নিরাপদ আশ্রয় হবে না। ঘরের মধ্যে থাকাই নিরাপদ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com