সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দিন দিন নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় নদীকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থার অনিশ্চয়তা বাড়ছে বলে জানিয়েছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। সংগঠনটির মতে, শতবছর পূর্বে দেড় হাজার নদ-নদী থাকলেও বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৭০০টিতে। মানুষের অমানবিক কাজের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহ¯পতিবার অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জল ও জনতন্ত্র’ শীর্ষক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এমন তথ্য জানানো হয়। এসব মন্তব্যের সঙ্গে দেশের নদীগুলোর দুরবস্থার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে সেমিনারে। পটুয়াখালীর পাখিমারা বাজার সংলগ্ন এলাকায় ‘পানি ও জনতন্ত্র’’ বিষয়ে সাধারণ মানুষ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা নদীর করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, নদী উন্নয়নে তৃণমূলের জ্ঞান কাজে লাগাতেই হবে। পাশাপাশি তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে নদীর অধিকার, পানির অধিকার ও সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বক্তারা আরো বলেন, মানুষের অমানবিক কাজে নদী হারাচ্ছে নাব্য। ফলে কমে যাচ্ছে নদীর সংখ্যা। বর্তমানে বাংলাদেশে নদী-উপনদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০টি। শতবছর আগে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নদীর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হবে। যার প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন উপকূলীয় জনকল্যাণ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে আমরা নদী মেরে ফেলেছি। বাঁধের স্লুইচগেইটগুলো অকেজো হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চল কৃষিকাজের উপযোগিতা হারাচ্ছে। এছাড়া মেঘনার মোহনা পর্যন্ত লবণ পানি উঠে আসছে। যেটি কৃষির মারাত্মক ক্ষতি করবে।
তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ পার্লামেন্টের ফাউন্ডার এবং সিইও সোহানুর রহমান বলেন, জলের সাথে জীবনের যেমন স¤পর্ক জলের সাথে জীবিকারও ঠিক তেমনই সম্পর্ক। পানি নীতিমালা তৈরিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও মতামত নিতে হবে। পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পানির উৎস সংরক্ষণে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই হবে।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, নদীকে বাঁচাতে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। তাই জল ও জনতন্ত্র বিষয়টি একটি চিন্তাধারাকে সামনে নিয়ে এসেছি আমরা। যার মূল লক্ষ্য জনসাধারণকে নদীর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা। এরই ধারাবাহিক একটি উদ্যোগ পানি জাদুঘর। যার মাধ্যমে পানি ও নদী নিয়ে মানুষ নদীর ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে পারছে।
নেপালের মহিলা অধিকার মঞ্চের উপদেষ্টা সাবিত্রি পোখারেল বলেন, ইচ্ছাশক্তিই সবচেয়ে বড়, ইচ্ছা থাকলে অনেক বড় বড় কাজ স¤পন্ন করা সম্ভব। তাই সমস্যা সমাধানে কমিউনিটির লোকজনেরই আন্তরিকতা থাকতে হবে। সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারীর সরাসরি সংযোগ তৈরি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নদীর ইতিহাস ঐতিহ্য আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন। তৃণমূলের কাছ থেকে পাওয়া ধারণা ও পরামর্শ কাজে লাগিয়ে নদীকে বাঁচাতে হবে। ভালবাসা বাড়াতে হবে নদীর প্রতি। তাহলেই নদী বাঁচবে।