1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জননেতা আয়ূব বখত জগলুল : স্মৃতির মণিকোঠায় তুমি অমর

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

ম ফ র ফোরকান ::
(পূর্ব প্রকাশের পর)
পৌরসভা পরিচালনায় পৌর ম্যানুয়েল অনুসরণে আয়ূব বখত জগলুল ছিলেন খুবই সচেতন। ‘খাস জায়গা দখল করে তারুণ্যে’র প্রতীকের মত পৌর সীমানা বৃদ্ধি ও তা বিলি-বণ্টনের মাধ্যমে চামচাপোষণ নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন সুনামগঞ্জের গর্বের ধন, নীতিবান মেয়র জগলু। কারো জায়গা-জমি গ্রাস, নির্বাচনে বিরোধিতা করার কারণে কাউকে পৌরসভা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, ভূমি থেকে উচ্ছেদ ও কারো ভূমি গ্রাস করার মত কোন নজির ‘বখত পরিবার’ থেকে নির্বাচিত নেক বা জগলুল-এর নেই। অন্যদিকে কথিত সততার প্রতীক জনপ্রতিনিধি নানা বিতর্কিত কর্মকা- গুনে শেষ করার নয়। ওই জনপ্রতিনিধির এসব ‘বীরত্বপূর্ণ’ কাজে চামচারা থাকতো বেজায় খুশি। অপরদিকে, পৌরসভা থেকে চাকরি খুইয়ে বা ব্যবসার ভূমি হারিয়ে দরিদ্র পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটিকে যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছিল তার হিসাব পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। পৌরসভার পুরনো স্টাফদের কেউ কেউ তাদের সতীর্থদের করুণ ও অভিশপ্ত জীবন স্মরণ করে অশ্রুসজল হতে দেখা যায়।
পৌরসভার প্রয়োজনে খাস ভূমি ব্যবহার নেহায়েত প্রয়োজন হয়ে পড়লে মেয়র জগলুলকে দেখেছি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনায় বসতে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে ভূমি ব্যবহারের অনুমতি আনতেন তিনি। সুনামগঞ্জের কিচেন মার্কেট তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। শহরে একটি শিশু পার্ক স্থাপন মেয়র জগলুলের স্বপ্ন ছিল। এরজন্যও ডিসির কাছ থেকে কয়েক একর ভূমিও আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি।
অপরদিকে আরেক জনপ্রতিনিধি পৌরসভাকে করে গিয়েছিলেন দেউলিয়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত। বছরের পর বছর সুনামগঞ্জ পৌর শহর ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত। কথিত জননন্দিত ব্যক্তির দুর্নীতির বিষবৃক্ষটি ডালাপালা ছড়িয়ে যখন মহীরুহে রূপ নিচ্ছিলো তখন তার বিরুদ্ধে দুইবার শক্তিশালী দুটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। একটি হয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক। তদন্তে নজিরবিহীন সততার দাবিদারের যে দশা হয়, এক কথায় তাকে বলা চলে- লেজে গোবরে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদন্তটি করে ২০১৪ সালের ৬ মার্চ। তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন উপসচিব আব্দুল হান্নান। ওই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল তদন্তে।
ডিসি মো. জাফর সিদ্দিক নিজে পৌরসভা পরিদর্শন তদন্ত করেন ২০০৬ সালের ১০ মে। এর আগে ক্ষমতার মত্তে চামচাদের প্রিয় মি. ক্লিন ইমেজধারী ব্যক্তির প্রচার দিয়ে ফিরছিলেন তার পৌরসভা তদন্ত করার ক্ষমতা কোন ডিসি রাখেন না। তৎকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে পাজারো গাড়ি কিনেছিলেন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া। সিলেট-সুনামগঞ্জ রাস্তায় যে ‘তোরণ’টি দ-ায়মান সেটি নির্মাণকালেও সড়ক বিভাগের কোনো অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়নি। শুধু তাই নয়, সকল আইন-কানুন উপেক্ষা করে রেজুলেশনের মাধ্যমে অনেক কাউন্সিলরকে পৌরভূমি ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়া হয়েছিল। চেয়ারম্যানের এসব কাজে বাধ সাধেন সুনামগঞ্জের তৎকালীন ডিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন। এ ডিসি কাজে-কর্মে ছিলেন খুবই দক্ষ। তাঁর স¤পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ডিসি কামাল উদ্দিন এমন এক লোক যাঁর মাথার পুরোটাই মগজ। এই কামাল উদ্দিনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে বেহাল অবস্থা হয়েছিল ‘দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মহাসেনাপতি’র।
মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে পদে পদে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধির আইন লঙ্ঘনের চিত্র। দু’একটি কাহিনী উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি। ওই জনপ্রতিনিধি পৌরসভার উন্নয়নের ১৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি পাজারো গাড়ি কিনেন। সরকারি নিয়মে গাড়ি কেনার কথা রাজস্ব খাতের টাকায়। আর এক খাতের টাকা অন্যখাতে খরচ দ-নীয় অপরাধ। বেআইনিভাবে কেনা এ গাড়িটি সারাদিন ব্যবহার করা হতো ব্যক্তিগত কাজে। সরকারি নিয়ম মোতাবেক একজন পৌর চেয়ারম্যান ৭ লিটার তেল খরচের ক্ষমতা রাখেন। তদন্তে পাওয়া, তার প্রতিদিনের তেল খরচ ছিল ২৫০-৩০০ লিটার। ওই জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিগত কাজে মৌলভীবাজারের শমশের নগর গেলে গাড়ির লগ বইয়ে উঠতো সরকারি কাজে শমশের নগর ভ্রমণ। ঢাকায় গেলে গাড়ির তেল খরচের পারদ বিমান খরচেরও উপরে থাকতো।
তদন্তে পাওয়া যায়, সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের পরিচালনার দায়িত্ব এক সময় পৌরসভার ওপর ন্যস্ত ছিল। এতে করে পৌরসভার আয় বৃদ্ধির একটা চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ইজারার টাকা পৌরসভা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাস টার্মিনালটি ফের জেলা পরিষদের কাছে চলে যায়। জেলা পরিষদ ও পৌরসভা মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী টার্মিনাল খরচের পুরো টাকা ১০ বছরে ১০টি কিস্তিতে পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু সুনামগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান টার্মিনালটি ইজারা নেওয়ার দিন প্রথম কিস্তির ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন ঠিকই। কিন্তু পরবর্তী ৮বছরের ৮টি কিস্তির মধ্যে আর একটা কানাকড়িও পরিশোধ করা হয়নি। প্রতি বছর টার্মিনাল ইজারা দিয়ে প্রাপ্ত পুরো টাকা উদরস্থ করা হয়। আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৩,৬০,০০০ গুণ ৮ সমান ২৮,৮০,০০০ টাকা।
দ্বিতীয় তদন্তটি করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. জাফর সিদ্দিক। এ তদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে পাহাড় সমান দুর্নীতি। একটি ঘটনা উল্লেখ করি- কথিত জননন্দিত ব্যক্তি একবার ঢাকা সফরে গেলেন। এ সফরের বিপরীতে যাতায়াত বাবত মাত্র দুটি বিল করেন তিনি। শুনলে জিহ্বায় অজান্তে হলেও কামড় দেবেন সবাই। কারণটা হল, একই সফরে পৌর তহবিল থেকে দুই ধরনের দুটি বিল উত্তোলন করেন তিনি। গাড়ির তেল খরচ বাবত একটি। পাশাপাশি বিমান ভাড়া বাবত টাকা তুলে নিয়ে পকেটস্থ করার সুযোগ হাতছাড়া করা হয়নি।
এবার ডিসি জাফর সিদ্দিকের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দুটো কথা বলি। এ প্রতিবেদনটিও গিয়েছিল স্থানীয় সরকার সচিব বরাবর। আমার দৃষ্টিতে, একটি অনন্য তদন্ত রিপোর্ট এটি। (চলবে)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com