1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শাল্লায় অকেজো ১৭ কম্বাইন্ড হারভেস্টার : ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শাল্লা প্রতিনিধি ::
শাল্লা উপজেলার ৬টি হাওরের বোরোধানে সোনালী রঙ লেগেছে। হাওরে সোনালী রঙ মানেই পেকে গেছে বোরো জমির ধান। কিন্তু বছরে একটি মাত্র উৎপাদিত ফসলের ধান কর্তন করতে গিয়ে কৃষকরা এখন পড়েছেন বিপাকে। ধান কাটার মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেস্টার)-এর সংকট দেখা গেছে। সরকারের ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে দেয়া ৪৯টি মেশিনের মধ্যে ১৭টিই অচল হয়ে গেছে। সচল আছে মাত্র ৩২টি মেশিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রুত ধানকাটার জন্য যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনগুলো উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছিল তা পূর্ব ব্যবহৃত ছিল। ফলে বছর যেতে না যেতেই বহু মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে। ইঞ্জিনিয়ার ও মেশিনের পার্টস আনতে যেতে হয় ঢাকায়। বাধ্য হয়েই অনেক কৃষক মেশিনগুলো ইতিপূর্বেই বিক্রি করে ফেলেছেন। এবছর ধানকাটার পর্যাপ্ত মেশিন না থাকায় কৃষকরা এখন পড়েছেন চরম বিপাকে।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ অন্যান্য জেলা থেকে ধানকাটার কিছু শ্রমিক এসেছেন উপজেলার বেশক’টি গ্রামে। সেই শ্রমিকরা প্রতি কেয়ার জমির ধান কর্তন করতে চাইছেন ৬ মণ ধান! যার বাজার মূল্য ৬ হাজার টাকা। কৃষকরা বলছেন প্রতি কেয়ারেই ফলন হয় মাত্র ১৭ থেকে ২০ মণ ধান। এরমধ্যে প্রতি কেয়ারে খরচ হয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। সবকিছু মিলিয়ে বোরোধান আবাদে কোনো লাভই নেই কৃষকদের। তারপরও জমি পতিত না রেখে চাষাবাদ করছেন তারা।
কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটতে হলে কৃষকদের প্রতি কেয়ারে গুনতে হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আবার মেশিনে ধান কাটলে ধান দ্রুত গোলায় তুলতে পারলেও, গোখাদ্যের খড় নষ্ট হয়ে যায়। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে শ্রমিকরা। কারণ ধানের দাম আর খড়ের দাম সমান! প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে একাধিক গবাদিপশু থাকায় অনেক কৃষক শুধু খড়ের জন্যই জমিতে আবাদ করে থাকেন বলে জানান।
উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ডুমরা গ্রামের বর্গাচাষী মহাপ্রভু দাশ বলেন, বোরোধান আবাদে আমাদের কোনো লাভ নেই। কারণ, প্রতি কেয়ার জমি রংজমা (বর্গা) নিতে জমির মালিককে দিতে হয়েছে ৭ হাজার টাকা। প্রতি কেয়ারে সাড়ে ৪শ’ টাকার বীজ লাগে, হালচাষে যায় ৮শ’ টাকা, জমি রোপণে ৯শ’ টাকা, সার দিতে হয় ৭শ’ টাকার, সেচে লাগে ৬শ’ টাকা, ধান কাটতে ২হাজার ৫শ’ টাকা, মাড়াই দিতে টাকা লাগে ৭শ’, হাওর থেকে বাড়িতে আনতে ট্রলির ভাড়া দিতে হয় ১ হাজার টাকা।
এক কেয়ার জমিতে ধানের ফলন হয়েছে মাত্র ১৭ মণ। ধানের গোলা তৈরি করতে ৫হাজার টাকা খরচ যায়। এছাড়াও পরিবারসহ ছেলে-মেয়ে সবার শ্রম তো আছেই। শুধু গরুর খড়ের জন্য চাষাবাদ করেন বলে জানান তিনি।
সুখলাইন গ্রামের কৃষক মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, কৃষক ধান গোলায় তুলতে উভয় সংকটে পড়েছে এবছর। একে তো রয়েছে শ্রমিকের সংকট। অন্যদিকে শ্রমিক মজুরি চাচ্ছে বেশি। এছাড়াও সরকার ভর্তুকি দিয়ে যে মেশিন কৃষকদের দিয়েছিল সেই মেশিনগুলোর মান ভালো ছিলো না। যেকারণে নষ্ট হয়ে গেছে বহু কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। ফলে সময় মতো ধান কাটতে পারছি না আমরা।
শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের কৃষক ইকরামুল হোসেন বলেন, যে মেশিনগুলো বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো অনেকটা নি¤œমানের। যেকারণে মানুষ এখন সময়মত ধান কাটতে পারছেন না। অভাব রয়েছে শ্রমিকেরও।
হবিবপুর ইউনিয়নের অধীর রঞ্জন দাশ বলেন, হাওরে ধান কাটার মেশিন নেই, শ্রমিকও কম। এক কেয়ার জমির ধান কাটতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। হাওরে মাত্র ধান কাটা শুরু। এ পর্যন্ত আনুমানিক ১৫ ভাগ কাটা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হবিবপুর ইউপি সদস্য বাবলু রায় বলেন, ২০২৩ সালে আমি একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন নিয়েছি। আমার মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। তিনদিন ধরে মেশিন পড়ে রয়েছে হাওরে। আমি এখন সিলেটে যাচ্ছি ইঞ্জিনিয়ার ও পার্টস আনতে। কৃষকরা উপায় না পেয়ে পুরানো মেশিনগুলোর অর্ধেকই বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক রণজিৎ কুমার দাশ বলেন, হাওরে মেশিনই তো আমি দেখছি না। ৩২টি মেশিন কই? পুরানো মেশিন কেনো কৃষকদের মাঝে নতুন বলে বিতরণ করা হলো? একারণেই মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এই দায় কে নিবে? হাওরে ধান পেকে গেছে। কিন্তু মেশিন ও শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না কৃষক। হাওরে মাত্র ধান কাটা শুরু হয়েছে। ১০ ভাগেরও কম কাটা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা কীভাবে মিথ্যাচার করলেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ বলেন, মাঠপর্যায়ে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। খবর নিয়ে জেনেছি এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। আর এমনিতেই ধান কাটার মেশিনগুলো ছিল চাইনিজ। এরমধ্যে আবার পুরানো মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এমনটি কেনো হলো? কারা করলো? তাদের কারণে কৃষকরা আজ ক্ষতিগ্রস্ত। এবার হয়তো বছর ভাল। কিন্তু এখন যদি পাহাড়ি ঢল আসতো, তাহলে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়ত। পুরানো মেশিন বিতরণ করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তুষার বলেন, উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪৯টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ৭০শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে বিতরণ করা হয়েছে। পুরানো মেশিন বিতরণ করায় ১৭টি মেশিন অকেজো হয়ে গেছে। আমরা কো¤পানিকে বলেছি আমাদের কৃষকদের মেশিনগুলো সচল করে দেয়ার জন্য। ব্যবহার করা মেশিনগুলোই বিতরণ করা হয়েছিল। মেশিনগুলো ছিল দুর্বল। তারপর তাদের আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। কিন্তু মেশিনের পার্টস নাই। এছাড়াও ৪ মাস পরে যে কিস্তির টাকা দিতে হয়, তা আমাদের কৃষক ভাইয়েরা টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। কো¤পানি তখন প্রযুক্তির মাধ্যমে মেশিন লক করে দেন। এখন একটা মেশিন নষ্ট হলে পার্টস আনতে হয় ঢাকা থেকে। এবছর ভাল তাই কোনো সমস্যা হবে না। এখন পর্যন্ত ৩২ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বলে মুঠোফোনে জানান তিনি। কিন্তু ৩২ ভাগ ধান কাটা হলো কীভাবে জানতে চাইলে তিনি আরও জানান হাওরে তাদের মাঠকর্মী রয়েছে। পরক্ষণেই হোয়াটসঅ্যাপে ২৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে এমন তথ্য তিনি জানান! তবে কৃষি কর্মকর্তার ধান কর্তন নিয়ে এমন লুকোচুরির কারণ জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, এবছর উপজেলায় ২১ হাজার, ৭১৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন হবে ৯৫ হাজার, ৫৫২ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৪শ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com