1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০২:১০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ইবাদতে কাটুক লাইলাতুল কদর : মাওলানা কামরুল ইসলাম বিন কাসেম

  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

মুসলমানদের কাছে লাইলাতুল কদর এক বরকতময় ও মহিমান্বিত রাত। এ রাতে কোরআনে কারিম নাজিল হয়েছে এবং আল্লাহতায়ালা একটি সুরা নাজিল করেছেন এ রাতের নামে। এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে মানুষের পুরো বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
মানুষের পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য, অর্থাৎ তার সামনে যা যা আসবে বা তার জীবনে যা কিছু ঘটবে, সেসব নির্ধারণ করা হয়। তার বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যু, তার ভালো-মন্দ, তার রুটি-রুজি ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করা হয় এই রাতে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘(কদরের) এই রাতে প্রত্যেক হেকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ -সুরা দোখান ৪
ইতিহাস :
তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বনি ইসরাইলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনো অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানরা এ কথা শুনে অবাক হলে এ সুরা নাজিল হয়। এতে এ উম্মতের জন্য শুধু এক রাতের ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জারির (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা সুরা কদর নাজিল করে উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তাফসিরে মাজহারিতে এসেছে, শবেকদর উম্মতে মোহাম্মদীর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
ফজিলত :
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কদরের রাতে ইমান ও সওয়াবের নিয়তে নামাজ পড়ে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ -সহিহ বোখারি
অন্য বর্ণনায় আছে, ভবিষ্যতের গুনাহও মাফ করে দেওয়া হয়। হজরত উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কদরের রাতের অন্বেষণে সেই রাতে নামাজ পড়ে এবং তা পেয়ে যায়, তার অতীতের ও ভবিষ্যতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ -সুনানে নাসাঈ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানে এমন একটি রাত আছে, যার ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। যে এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে অবশ্য বঞ্চিতের কাতারে আছে।’ -সুনানে নাসাঈ
ফেরেশতা নাজিলের রাত :
এ রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এখানে রুহ দ্বারা হজরত জিবরাইল (আ.)-কে বুঝানো হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কদরের রাত হয় তখন হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের দলসহ দুনিয়াতে অবতীর্ণ হোন এবং আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার জন্য দোয়া করেন যারা দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন। তাফসিরে মাজহারিতে এসেছে, ফেরেশতারা প্রত্যেক শান্তি ও কল্যাণকর বিষয় নিয়ে আসেন।
লাইলাতুল কদর কবে :
কোরআনে কারিমের বর্ণনা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, শবেকদর রমজান মাসেই। কিন্তু এর সঠিক কোনো তারিখ জানা যায়নি। তাফসিরে মাজহারিতে শবেকদর স¤পর্কে বোখারির একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়, শবেকদর রামজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যেই আসে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে শবেকদর তালাশ করবে। আর ইমাম মুসলিম (রহ.) তার সহিহ মুসলিম
শরিফে বলেন, শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো।
লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা :
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক শুরু হলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কদরের রাত লাভের উদ্দেশে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন, রাত জাগরণ করতেন এবং নিজ পরিবারকে জাগাতেন।’ -সহিহ বোখারি
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি পরিশ্রম ও ইবাদত করতেন যা অন্য সময় করতেন না। তিনি রমজানের শেষ দশককে এমন কিছু নেক কাজের জন্য নির্দিষ্ট করতেন যা মাসের অবশিষ্টাংশের জন্য করতেন না। এর মধ্যে রাত্রি জাগরণ অন্যতম। -সহিহ মুসলিম
লাইলাতুল কদরের আলামত :
বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে কদরের রাত চেনার কিছু আলামতের কথা পাওয়া গেছে। এর কয়েকটি হলো, রাতটি গভীর অন্ধকারময় হবে না। মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হবে। সে রাত হবে নাতিশীতোষ্ণ। মানুষ ওই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে তৃপ্তি পাবে। এ রাতে কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা রাত সম্পর্কে জানাতে পারেন। শবেকদরের রাতে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি হতে পারে। সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
শবেকদরের আলামত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘…ওই রাতের আলামত হলো, রাত শেষে সকালে যে সূর্য উদিত হবে, তা উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না।’ -সহিহ মুসলিম
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠা-া। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ -ইবনে খুযাইমা
আমল :
লাইলাতুল কদর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। তাই বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করা। আমলগুলো হলো, বেশি বেশি কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা, অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা, জিকির-আজকার করা, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা। বিশেষ করে সালাতুত তাসবিহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। তবে কত রাকাত আদায় করতে হবে বা কোনো সুরা দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট দলিল নেই। যত রাকাত ইচ্ছা এবং যেকোনো সুরা দিয়ে ইচ্ছা পড়া যায়।
আলেমরা বলেছেন, এ রাতে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। কারণ এ রাতে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী কারিম (সা.)-কে আরজ করলাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি বলে দিন যদি আমি জানতে পারি যে, শবেকদর কোন রাতে হবে, তাতে আমি কী বলব? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি বলবে, আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করো।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com