সামছুল ইসলাম সরদার ::
দিরাই উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত কুলঞ্জ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে হাওরবেষ্টিত মনোরম পরিবেশে রয়েছে নিভৃত পল্লী ‘হাতিয়া’। সাবেক সংসদ সদস্য গুলজার আহমেদ, সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি, সিলেট কোর্টের এপিপি শামসুল ইসলামসহ অনেক গুণীজনের স্মৃতিধন্য হাতিয়া গ্রাম। হাওরের পাড়াগাঁয়ে গ্রামটির অবস্থান হলে এ গ্রামটিতে রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও সরকারি কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রবাসী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ অর্থবিত্ত-স¤পদে গ্রামটির রয়েছে অতীত ঐতিহ্য। একসময় হাওরের এ বিশাল গ্রামটি ছিল শান্ত। গ্রামটির সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আধিপত্য ও গোষ্ঠীগত ভেদাভেদ ভুলে মিলেমিশে বসবাস করেছেন যুগের পর যুগ। কিন্তু কালের আবর্তে ঐতিহ্যবাহী গ্রামে আজ দিন-দুপুরে অস্ত্রের ঝনঝনানি, অশান্ত পরিবেশ, আতঙ্কিত গ্রামটির সহজ-সরল জনগণ।
গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বললে তারা সবাই গ্রামের অতীত শান্ত সুন্দর পরিবেশের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৫-২০ বছর আগে আমাদের গ্রাম ছিল শান্ত। আমাদের মাঝে গোষ্ঠী ও আধিপত্যের কোন প্রতিযোগিতা ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চলছে আধিপত্যের লড়াই। একদিকে বর্তমান কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের গ্রামের বাসিন্দা একরার হোসেন, অপরদিকে ইউপি সদস্য আমাদের গ্রামের সোহেল মিয়া। বছর দশেক ধরে জলমহাল, স্কুল কমিটি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি, সংঘর্ষ, সংঘাত লেগেই আছে। গত শনিবার দিনে-দুপুরে অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। এর কয়েক বছর আগেও আমাদের গ্রামে অস্ত্রের মহড়া হয়েছিল। এছাড়া ২০১৭ সালে জলমহাল নিয়ে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনাও ঘটেছে। রয়েছে দু’পক্ষের অনেক মামলা। আগে নেতৃত্ব দিতেন গ্রামের মুরব্বি, এখন নেতৃত্ব দেন কম বয়সী যুবক। আগে আদব-কায়দা শ্রদ্ধাবোধ ছিল, এখন শুধু গোষ্ঠীর আর শক্তির বড়াই। যার কারণে আমাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রামের আজ এ করুণ দশা। কখন কি ঘটে সে নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
সোহেল মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন ও তার বাহিনী। তিনি জলমহাল, কলেজ কমিটিসহ এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করতে তার বাহিনী দিয়ে গর্হিত কাজ করে থাকেন। প্রতিবাদ করলেই তিনি তার বাহিনী দিয়ে হামলা চালান। গত শনিবার দিনে-দুপুরে তার বাহিনী গ্রামের সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায়। দিরাই থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং অস্ত্রসহ দুইজনকে আটক করে। এর আগেও তার বাহিনী সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে।
একরার হোসেন বলেন, আমার জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু জনবিচ্ছিন্ন লোক আমাকে সমাজে হেয় করতে এবং আমার উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, আমার কোনো বাহিনী নেই। এলাকার সর্বস্তরের জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। বার বার কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনীত করেছেন। এলাকাবাসীর ভালোবাসাই আমার পথ চলায় সাহস যোগাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত শনিবার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের বংশের দু’পক্ষের মধ্যে অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। সেখানে আমাকে স¤পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি আইনের আশ্রয় নেব।
দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। একপক্ষ মামলা করেছেন। আসামি ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত।