হাসান বশির ::
পাউবো’র বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের বোরো ফসল। এতে নিঃস্ব হয়েছেন কৃষক। তারা আশা করেছিলেন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করবেন। কিন্তু সেটিও আর হয়নি। তলিয়ে যাওয়া কাচা ধান পচে সৃষ্ট অ্যামোনিয়া গ্যাসে মাছে মড়ক লাগে, মারা যায় হাঁস। পরিবার-পরিজন নিয়ে খাদ্য সংকটে পড়েন হাওরপাড়ের দরিদ্র কৃষক। তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় ঋণের বোঝা। এমন অবস্থায় কাজের সন্ধানে ঘর ছেড়ে শহর-নগরে চলে যান অনেকে। তবে তারা কবে ফিরবেন, আদৌ ফিরবেন কি-না এই প্রশ্নের উত্তর এখন অজানা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের কাটাখালি গ্রামের হতদরিদ্র বর্গাচাষী সেলি রহমান (৪৫)। অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে খোরাকি জোগাড় করতেন। কিন্তু এবার তার আর কিছুই নেই। নিঃস্ব কৃষক সম্প্রতি স্ত্রী, সন্তানসহ জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন ঢাকা শহরে। সেখানে কয়েক দিন ঘোরাফেরা করে এক আত্মীয়র সহযোগিতায় গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছেন।
মুঠোফোনে কথা হয় সেলি রহমানের সাথে। তিনি জানান, তার নিজেস্ব কোনা জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে প্রতি বছর ৩/৪ কিয়ার জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। এ ধান দিয়ে কোন মতে ৩/৪ মাসের খোরাকি জোগাড় হয়। বাকি দিনগুলোর খোরাকির জন্য দিনমুজুরি করতেন। কিন্তু এবার খরচার হাওরের বাঁধ ভেঙে তার কষ্টে ফলানো কাঁচা বোরোধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে গছে। ধান না পাওয়ায় বৈশাখ মাসেই এক বেলা খাবার ছিল না ঘরে। তাই তাকে পেটের তাগিদেই গ্রাম ছাড়তে হয়েছে। সেলি রহমান আরো জানান, গৃহস্থের ঘরেও ভাত নেই। তাই আগের মতো দিনমুজুরিরও সুযোগ নেই। কবে গ্রামে ফিরবেন এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে ‘জানি না’ বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠেন।
একইভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন বর্গাচাষী হাফিজুর (৪৫), নুর উদ্দিন (৩০)-সহ আরো অনেকেই। গ্রামের হাফিজুর (৪০) তারা স্ত্রী ছফিনা বেগম (৩৫) ও ছেলে মেয়ে নিয়ে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে চলে গেছেন। পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন নূর উদ্দিনও।
খরচার হাওরপাড়ের কৃষক রেজাউল মিয়া বলেন, জীবিকার তাগিদে অনেকে ঘর ছেড়েছেন। যারা ঘর ছেড়েছেন তারা আর কবে আসবে তা বলা অসম্ভব। আদৌ ফিরবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ। নিঃস্ব কৃষকের সামনে এখন কেবলই অন্ধকার।