স্টাফ রিপোর্টার ::
ভূমি জালিয়াতির অভিযোগে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফুল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ফুল মিয়া লালপুর গ্রামের মো. চান্দু মিয়ার পুত্র।
২৩/৪/২০১৭ খ্রি. তারিখে সুনামগঞ্জ সদর জোনের আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন একই ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরীর ছেলে মাসুদ সাজ্জাদ চৌধুরী। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সদর থানাধীন ৪০ নং জে.এল. সংক্রান্ত অচিন্তপুর মৌজার এস.এ ৩৬৬নং খতিয়ানের ২০০৯ নং দাগের ০.৭৬ একর আমন রকম ভূমির মূল মালিক ছিলেন সুরেন্দ্র কুমার পাল, বীরেন্দ্র কুমার পাল, গিরেন্দ্র কুমার পাল এবং বরিন্দ্র ওরফে বারিন্দ্র কুমার পাল। বর্ণিত দাগের ০.০৪৮ একর ভূমি ৪২৭৪/১৯৬৬ ইং নং রেজিস্ট্রারি দলিল মূলে ছমর উদ্দিন, কমর উদ্দিন, আমির আলী এবং মানিক উদ্দিন নামক চার ভাইয়ের নিকট বিক্রয় করে স্বত্ব ও দখল ত্যাগী হলে ছমর উদ্দিন গং চার ভাই তাতে মালিক দখলদার হয়ে চিহ্নিতভাবে তাদের নিজ নিজ অংশে স্বত্ববান ও দখলদার থাকাবস্থায় বর্ণিত ছমর উদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে ছমর উদ্দিনের এক স্ত্রী এবং দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তাতে মালিক দখলকার অবস্থায় ছমর উদ্দিনের স্ত্রী রমজান বিবি মারা গেলে তার দুই পুত্র আবুল কাশেম ও জালাল মিয়া এবং দুই কন্যা রাজিয়া বেগম ও সেজিয়া বেগম বর্ণিত ভূমিতে এককভাবে মালিক দখলকার থেকে তাদের নামে বর্ণিত ভূমি নামজারি করে ১২৬১ নং নামজারি খতিয়ান প্রাপ্ত হন।
পরে আবুল কাশেম গং ব্যক্তিগণ বর্ণিত ভূমি সম্পর্কে ৫১৯১/২০১৫ইং নং রেজিস্ট্রারি আম-মোক্তারনামা দলিলমূলে মো. মাহমুদুর রহমানকে তাদের পক্ষে আম-মোক্তারনামা নিযুক্ত করেন এবং বর্ণিত ভূমি বিক্রয়সহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য ক্ষমতা অর্পণ করেন। বর্ণিত আম-মোক্তারনামা মো. মাহমুদুর রহমান বর্ণিত ভূমির মালিকগণের পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ৩০৪৪/২০১৬ ইং নং রেজিস্ট্রারি দলিল মূলে মোছা. ফেরদৌসি বেগমের নিকট বিক্রি করলে ফেরদৌসী বেগম বর্ণিত ভূমিতে স্বত্ববান দখলকার থেকে তার নিজ নামে নামজারি করে ১২৯৬ নং নামজারি খতিয়ান প্রাপ্ত হন এবং বর্ণিত ভূমির খাজনাদি পরিশোধ করে বর্ণিত ভূমিতে স্বত্ববান দখলকার বিদ্যমান থাকেন।
অভিযোগে বলা হয়, আসামি ফুল মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহায়তায় সুনামগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ২২/০৪/১৯৭২ইং তারিখে ২৮১২ নং রেজিস্ট্রারি দলিলের ভলিয়মের সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠা সমূহ জালিয়াতির মাধ্যমে সঠিক দলিলের লেখা মুছে কিংবা সঠিক দলিলের পাতা ছিঁড়ে ফেলে নতুন পাতা সংযুক্ত করে নামাংকিত আসামি গ্রহীতা এবং মূল রেকর্ডের মালিক বীরেন্দ্র কুমার পাল ও গিরেন্দ্র কুমার পালকে দাতা দেখিয়ে একটি জাল, যোগাযোগী ও প্রাবঞ্চিক রেজিস্ট্রারি দলিল সৃজন করেন এবং অভিযোগে বর্ণিত দাগের ভূমি খরিদ করেছেন মর্মে আসামি মিথ্যাভাবে প্রচার করেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামির সৃজিত ২৮১২/১৯৭২ইং নং ‘জাল দলিল’ খানা আসামি সঠিক দলিল হিসেবে দাবি করে ঘটনার উল্লেখিত তারিখে সুনামগঞ্জের সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে নামজারি মামলা নং-ভিপি ৮৬/১৫-১৬ দায়ের করে নামজারির আদেশ প্রাপ্ত হন।
বাদী মাসুদ সাজ্জাদ চৌধুরী অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামির সৃজিত ২৮১২/১৯৭২ ইং নং দলিলের লেখক আব্দুল মান্নান, ‘জাল দলিলে’র সাক্ষী নিপেন্দ্র কুমার নন্দী ও নিরদ রঞ্জন চৌধুরীর হাতের লেখার সাথে তাদের হাতে লিখিত প্রকৃত রেজিস্ট্রারি দলিল সমূহের হাতের লেখা ও তাদের স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। এই ব্যক্তিগণের হাতে লিখিত ও স্বাক্ষরযুক্ত কতিপয় দলিল দালিলিক সাক্ষ্য হিসাবে দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামি সৃজিত ২৮১২/১৯৭২ ইং নং দলিলে সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আসামির সৃজিত ২৮১২/১৯৭২ইং নং ‘জাল দলিল’খানা রেজিস্ট্রার হওয়ার তারিখ ২২/০৪/১৯৭২ ইং সনের পূর্ব হতে আব্দুল গণি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি ১৯৭২ইং সনের বেশিরভাগ সময় কর্মরত ছিলেন। ১৯৭২ইং সনের শেষ দিকে আব্দুর রশিদ চৌধুরী সুনামগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করেন। আব্দুল গণি ২২/০৪/১৯৭২ইং তারিখে কর্মরত অবস্থায় বর্ণিত ‘জাল দলিলে’ আসামি আব্দুর রশিদ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে দলিল তৈরি করেন। আব্দুল গণি ও আব্দুর রশিদ চৌধুরীর স্বাক্ষর যুক্ত কয়েকটি দলিলের নমুনা প্রমাণ দালিলিক সাক্ষ্য হিসাবে দাখিল করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিপন গোপ বলেন, কোর্টের পিটিশন আমাদের কাছে এসেছে। তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।