স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুরের হাওর পরিদর্শন শেষে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রতি বছর হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের নামে যেনতেন কাজ হয়। প্রতি বছর বরাদ্দের সঙ্গে দুর্নীতিও বাড়ছে। এরপরও হাওর নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোন বিশেষ কোন চিন্তা-ভাবনা হচ্ছেনা। গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক দুর্যোগকালীন বিষয়ে কি কি করা দরকার তার কোন পরিকল্পনাও নেই। বক্তারা বলেন, হাওরের এই দুর্যোগ জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে দেখা উচিত। হাওরাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি ঋণ মওকুফ না হলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে কৃষকের ঋণের বোঝা আরো বাড়বে।
রোববার রাতে সুনামগঞ্জ শহরে দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর পত্রিকা কার্যালয়ে হাওর পরিদর্শন শেষে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল রায়, মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এনাম আহমদ, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব বিন্দু তালুকদার, সাংবাদিক শামস শামীম, এমরানুল হক চৌধুরী, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, শহীদ নূর আহমেদ প্রমুখ।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও হাওরের ৩০ ভাগ ধান সারা বাংলাদেশে যায়। হাওরের মাছ, গাছ, পাখিসহ জীব-বৈচিত্র্য অমূল্য সম্পদ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে সরকার কখনো বিশেষ চিন্তা করেনি। তিনি বলেন, হাওরের এই দুর্যোগকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
মোশরেফা মিশু বলেন, আমরা আজ হাওরের বিভিন্ন গ্রামের গিয়ে দেখেছি হাওরের অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘরে তালা ঝুলছে। স্থানীয় মানুষদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছি ফসল হারানোর পর ঘরে ভাত না থাকায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হাওর ইস্যু নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, অনেক রিপোর্ট হয়েছে, হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের আগ থেকেই কাজ নিয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার ছিল। তারপরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আজ হাওরের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। কিন্তু সরকার ত্রাণের নামে প্রহসন করছে। যে পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সিকিভাগও পাচ্ছেনা।
জোনায়েদ সাকি বলেন, হাওরের এই দুর্গতির বড় কারণ কিছু মানুষ। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্নীতির কারণে হাওরে এই বিপর্যয় নেমেছে। দুর্গত হাওরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে দুই বছরের জন্য সরকারি-বেসরকারি সকল ঋণ মওকুফ, জলমহাল ইজারা বন্ধ, বছর ব্যাপী চলার ব্যবস্থা করা, নদী খননসহ হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় এ নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে হাওরবাসীর দুর্ভোগ দুর্দশা তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, হাওরের দুর্নীতি-দুর্যোগ নিয়ে জনগণ আগাম বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দেয়নি। এই অঞ্চলের জনগণকে নিয়ে হাওর রক্ষায় আগাম ব্যবস্থা নিতে সরকারকে বাধ্য করার আহ্বান জানান তিনি। বাঁধরক্ষার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে কথা বলার আহ্বান জানান তিনি। সাকী হাওরের কৃষককে ৬ মাস রেশনিং এর আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, হাওরের মানুষ ত্রাণ চায়না, কিন্তু আজ বিশেষ অবস্থায় পড়ে তারা নিঃস্ব। এই অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করতে হবে। তিনি স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিল ইজারা বন্ধ রাখার দাবি জানান।
কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, হাওরের এই দুর্যোগে হাওরের নারী-পুরুষসহ সবাই অসহায়। ফসলহারানোর ফলে এলাকায় ডাকাতি, চুরি ও নারী নির্যাতন বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক। হাওরকে দুর্গত এলাকার ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি এর জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি দাবি করেন।
এছাড়াও অন্যান্য বক্তারা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি হাওরের প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানান।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার প্রতিনিধিবৃন্দ সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করে বিকেলে তাহিরপুরে কৃষক সমাবেশ করেন।