জেলার বিভিন্ন হাওরের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বোরো ফসল। তার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের দায়ী করছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। কৃষকদের দাবি বাঁধগুলোয় ২০/২৫ ভাগ কাজ করে দুর্নীতি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদাররা। জানাগেছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের আঙ্গারুলি, সোনাতলা কাইক্কার দাইর হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ ভেঙে ২শ’ একর বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৫টি হাওরের ২৫ হেক্টর বোরো ফসল জলাবদ্ধতায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় হাওরপাড়ের কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। এসব হাওরের বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। হাওরপাড়ের কৃষকগণ বাঁধ রক্ষায় মাটি ভরাটের কাজ করলেও শেষ রক্ষা হবে কি-না তা নিয়ে কৃষকরা চিন্তায় রয়েছেন। উপজেলার নলুয়ার হাওর ও মইয়ার হাওরের বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে, নারিকেলতলা এলাকায় বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। নারিকেলতলা সেতুর নিকটবর্তী দুইটি বাঁধে ও একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বাঁধের ফাটল ঠেকাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধ যদি দ্রুত সংস্কার না হয়, তা হলে যে কোনো মুহূর্তে নলুয়া ও মইয়ার হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে পারে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ নারিকেলতলা অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে হাওরের ফসল। নারিকেলতলায় বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
শাল্লা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি। ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের অন্তর্গত শ্রীহাইল গ্রামের জোয়ারিয়ার ৮শ’ মিটার বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। গত বছর জোয়ারিয়ার বাঁধ ভেঙেই ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া কাজ শুরু হয়নি ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজার ব্রিজ থেকে মুক্তারপুর গ্রামের ব্রিজ পর্যন্ত বাঁধের কাজ। এই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার। শুরু হয়নি ৩নং বাহাড়া ইউনিয়নের হরিনগর গ্রামের ১৬০ মিটার বাঁধের কাজ। তাছাড়া সদর ইউনিয়নের খল্লিগ্রাম থেকে মনুয়া গ্রাম।
অপরদিকে, পিআইসি কমিটির ৩৬টি বাঁধের কাজও শেষ হয়নি। আনন্দপুর গ্রামের দক্ষিণ দিকে কেল্লা ও মাদারিয়া খুড়েরখালের মধ্যভাগে বাঁধ না নির্মাণ করায় বিশাল ছায়ার হাওরে যে কোনো মুহূর্তে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা কৃষকদের।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের নয়াবারুঙ্কা খালের বাঁধ ও জানালের বাড়ির ঢালাবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ওই বাঁধের কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। ঢলের পানিতে নয়াবারুঙ্গা খালের বাঁধের দক্ষিণ দিকের বাঁধ ভেঙে সিংরাঘাটের হাওর ও শনির হাওরে পানি ঢুকছে। জালালের বাড়ির ঢালার বাঁধও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ওই বাঁধ রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষকরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের দুর্নীতিতে এবারও অনেক হাওরের বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব না হওয়ায় বোরো ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন না। কৃষকদের দাবি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের শাস্তি দিতে হবে কঠোরভাবে। আমরাও কৃষকদের দাবির সাথে একমত পোষণ করছি।