স্টাফ রিপোর্টার ::
বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠন, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টিমান উন্নয়নে মানসম্পন্ন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন, বিপণন ও গ্রহণ নিশ্চিত করতে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৌশল প্রণয়নের জন্য “পলিসি ডায়ালগ ট্যুয়ার্ডস সাসটেইনেবল ইউনিভার্সাল সল্ট আয়োডাইজেশন” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় জানানো হয়, এখনো বাজারে যে সব আয়োডিন লবণ বিক্রি হয় তার ৪০শতাংশই যথাযথভাবে আয়োডিন সমৃদ্ধ নয়।
কর্মশালার স্বাগত বক্তব্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনেশিয়েটিভ এর এ্যাকটিং কান্ট্রি ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আশেক মাহফুজ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয়ে সিআইডিডি প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা শতভাগ সফলতা পাই নি। এখনো বাজারে যেসব আয়োডিন লবণ বিক্রি হয় তার ৪০ শতাংশই যথাযথভাবে আয়োডিন সমৃদ্ধ নয়।
মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর সিআইডিডি প্রকল্প এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনিসিয়েটিভ (এমআই)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অর্থ) বিসিক মো. হাবিবুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিসিকের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশল ও সিআইডিডি প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. ফররুখ আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কামরুজজামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি মোহাম্মদ শফিউল আলম। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনিসিয়েটিভ (এমআই)-এর এ্যাকটিং কান্ট্রি ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আশেক মাহফুজ।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এই কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে আয়োডিনের অভাবে কি ধরনের প্রভাব আগামী প্রজন্ম ও আমাদের সমাজের উপর পড়ছে সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং আয়োডিনযুক্ত লবণের ব্যবহার নিশ্চিত করনের মাধ্যমে আয়োডিন ঘাটতি দূর করা। অনুষ্ঠানের যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের সকলেই সমাজের বিভিন্নস্তরের নেতৃত্বে রয়েছেন, তারা যদি বিষটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তবে আমরা উদ্দেশ্য অর্জনের পথে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবো।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম বলেন, ৮০ এর দশকে আমাদের দেশে গলগ- রোগ প্রকট আকার ধারণ করে। ঠিক সেই সময়ে এই প্রকল্প কার্যক্রম গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে গলগ- রোগ দৃশ্যমান নয়। কিন্তু এর থেকেও ভয়াবহ কিছু অদৃশ্য রোগ প্রতিনিয়ত ঘাতকের মত নীরবে আমাদের ক্ষতি করে চলেছে। একজন স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ১৫০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিনের প্রয়োজন হয়, আর একজন গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে এর চাহিদা ২০০ মাইক্রোগ্রাম। ডিজিটাল দেশ গড়তে হলে দরকার বুদ্ধিমান প্রজন্ম। আর বুদ্ধিমান প্রজন্মের জন্য দরকার সুস্থ মা, যিনি আয়োডিন স্বল্পতায় থাকবে না। তাহলেই আমরা দেশ গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান বলেন, লবণ আইনের সংশোধন হচ্ছে। কিন্তু যেটা বেশি দরকার তা হচ্ছে বেশি বেশি প্রচারণা। তিনি যথাযথভাবে প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
কর্মশালায় “দৈনন্দিন খাদ্যে আয়োডিন স্বল্পতার গুরুত্ব, নিরসনে প্রয়োজনীয়তা ও আমাদের করণীয়” বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি এন্ড রুরাল ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ।
কর্মশালার সভাপতি জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্যই একজন প্রতিবন্ধী সন্তান লালন-পালন করা খুবই কষ্টকর ও চিন্তার বিষয়। দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী। অথচ এখনো বেশিরভাগ মানুষেরই খোলা লবণ কেনার প্রবণতা দেখা যায়। আয়োডিনযুক্ত লবণের দাম সকলের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনিসিয়েটিভ (এমআই)-এর প্রতিনিধিবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা পরিচালনায় সহায়তা করে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সার্ভিস গ্রুপ (সিবিএসজি)।