মতিউর রহমান::
কত ছবি কত গান, যা দেখেছি, যা শুনেছি তাই লিখছি।
“মাথা যায় যাবে তবু মাথা নোয়াব না;
“একুশ মানে মাথা নত না করা”।
শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সাথে স্মরণ করছি সুনামগঞ্জের ভাষা সৈনিকদের। জনাব হুসেন বখ্ত, জনাব আব্দুল হাই, আব্দুল হক, আব্দুজ জহুর, খলিলুর রহমান চৌধুরীসহ আরো অন্যান্য যারা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যাঁদের নাম না জানার জন্য এখানে উল্লেখ করতে পারলাম না এজন্য দুঃখিত।
সুনামগঞ্জের সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে। বর্তমানে যেসমস্ত বন্ধুরা গবেষণা কাজে লিপ্ত, তারা সুনামগঞ্জের ভাষা আন্দোলনের বিস্তারিত গবেষণা করে প্রকাশ করবেন এই অনুরোধ জানাচ্ছি।
১৯৫২ সালে বর্তমান আলফাত উদ্দিন স্কয়ার এলাকায় প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করে প্রদর্শন করেছিলেন বাবু গণেশ প্রসাদ বসু। কিন্তু সেই শহীদ মিনারটি টিকেনি, কারণ সেটা নির্মিত হয়েছিল কাগজ ও বাঁশ দ্বারা। গণেশ প্রসাদ বসু’র নির্মিত শহীদ মিনারের পর ১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলা শহর সুনামগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। এই লজ্জা কার?
আমি মনে করি এ লজ্জা আপনার আমার সবার। এ ব্যাপারে যতোই ওজর তুলি তা কিন্তু ধর্তব্যের মধ্যে নয়। এবারের মহান শহীদ দিবসে আসুন, সবার মন থেকে অতীতের বিতর্ক আর গ্লানি মুছে, সবাই। সাদা মনে বর্তমান জায়গাতেই নতুন। আঙ্গিকে পরিবর্ধন করে শহীদ মিনার স্থাপন করি। শহীদ মিনার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটা প্রতিনিধি দল আইন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও অন্যান্যদের সাথে দেখা করে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে একটু জায়গা সবাই মিলে বন্দোবস্ত নিয়ে আসি। আমার মনে হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই যথেষ্ট। স্বাধীনতার পর থেকে বেশ কয়েকবার স্থানীয় প্রশাসন ও শহরের গণ্যমান্য পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
অনেকে বলেন যে, আইন মন্ত্রণালয় নাকি বন্দোবস্ত দিবে না। আইন মন্ত্রণালয় যারা চালাচ্ছেন বিশেষ করে আইনমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা বাংলাদেশেরই মানুষ। তাদের ছেলে-মেয়ে, তাদের আত্মীয়-স্বজন, তারা নিজেরাই বিভিন্ন দিবসে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দেন। আমাদের নেতৃবৃন্দ যদি আন্তরিকভাবে তাদের একটু বুঝান তবে খালি হাতে ফিরতে হবে না। প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছার।
সম্মানিত নেতৃবৃন্দ, আপনারা এক সাথে কাজ করে শহীদ মিনার নেই সুনামগঞ্জে, এই অপবাদ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। এবারের শহীদ দিবসে আপনাদের কাছে এই প্রত্যাশা। আসুন শুধু একদিনের জন্য নয়, সারা বছরের জন্য বাঙালি হই।
দৈনিক সুনামকণ্ঠে ‘শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার?’ সংবাদের উপর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাচ্চা-কাচ্চারা শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি পানির জন্য, এই লজ্জা কার?
১৯৭১ সালে আমরা ইট-পাথর-বালু তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বয়ে নিয়ে এসে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলাম। যেহেতু আমরা এখনো জীবিত আছি আমাদের জীবদ্দশায় শহীদ মিনারের অবমাননা সহ্য করা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কখনোই সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষ যারা আছে তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আমি মতিউর রহমান কড়জোরে আবেদন করছি যেহেতু শহীদ মিনার নির্মাণে আমিও ছিলাম তাই শহীদ মিনারটির রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার বিভিন্ন দায়িত্ব আমি নিজ ব্যয়ে নিতে চাই। দায়িত্বভার গ্রহণে প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ আমি লিখিত দিতেও প্রস্তুত আছি।