1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সাইনবার্ডে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার : মানা হচ্ছে না উচ্চ আদালতের নির্দেশনা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মাহমুদুর রহমান তারেক ::
২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানারে ইংরেজি ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু সেই আদেশ সুনামগঞ্জে মানছে না বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটা উদাসীন।
শহরের মোক্তারপাড়া রোডের অভিজাত বিপণি বিতান লন্ডন প্লাজা। লন্ডন প্লাজার মূল ভবনের নাম লতিফ প্লাজা। প্লাজার প্রবেশমুখের দোকানের নাম আরাফাত জেন্টস ক্লাব। প্রথম তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত জুনিয়র স্টাইল, প্লাস পয়েন্টসহ অসংখ্য দোকান আছে যেগুলোর নাম ইংরেজিতে।
শুধু লন্ডন প্লাজায় নয় শহরের দোজা মার্কেট, নেজা প্লাজা, হাসননগরের এনি প্লাজার অনেক দোকানের সাইনবোর্ডে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার দেখা গেছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি শব্দে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখার প্রবণতা বেশি।
এছাড়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজিতে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ছাড়াও বেসরকারি সংস্থাগুলোর নামের সাইনবোর্ডে ইংরেজিতে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ছাত্রনেতা শাহ জুনায়েদ আহমদ সৃজন বলেন, ইংরেজিতে যদি বিদ্যালয়ের নামকরণ হয়, বাংলা ভাষার চেয়ে শিক্ষার্থীরা ইংরেজির প্রতি ঝুঁকবে বেশি। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজর দেয়া উচিত।
সাবেক ছাত্রনেতা রিংকু চৌধুরী বলেন, সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিলবোর্ডে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা আমাদের জন্য লজ্জাজনক, বিব্রতকর। স্কুল, দোকানপাটের নাম দেয়া হচ্ছে ইংরেজিতে, ব্যবহার হচ্ছে ইংরেজি শব্দ।
ছাত্রনেতা তানজিলুর রহমান বলেন, ভাষার জন্য রফিক, সালাম, জব্বার প্রাণ দিয়েছেন। সেই বাংলা ভাষা আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করি না। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু আজো হয়নি। অথচ বৃটেনের একটি শহরের নাম ‘বাংলা টাউন’। তারা আমাদের ভাষাকে শ্রদ্ধা করলেও আমরা পারছি না। নতুন প্রজন্ম ভাষা সম্পর্কে উল্টো ধারণা পাবে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র মোসাহিদ আহমদ বলেন, বাংলাভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক তাদের কনটেন্ট-এ বাংলা অপশন যোগ করেছে। এখন সহজেই বাংলা ভাষায় স্ট্যাটাস, চেক-ইন দেয়া যায়। অথচ আমাদের দেশে বাংলার ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হয় না।
বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান চৌধুরী রাসেল বলেন, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে আইন মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে পারে। দরকার হলে জনগুরুত্ব বিষয় বিবেচনা করে, বাংলা ভাষা ব্যবহারে আইন করা হোক।
জেলা খেলাঘরের অন্যতম সংগঠক মো. রাজু আহমদ বলেন, নির্দেশনা আছে হাইকোর্টের, সব ধরনের সাইনবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নাম্বার প্লেইট বাংলাতে লেখার। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সব জায়গায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের ছড়াছড়ি। বাংলা ভাষা ব্যবহারকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষা ব্যবহারে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
কালীপুর সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা গীতশ্রী রায় বলেন, মাতৃভাষা বাংলার জন্য রফিক, সালাম, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। পৃথিবীতে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি ছাড়া আর কোনো জাতি প্রাণ দেয়নি। এটা আমাদের জন্য গৌরব ও অহংকারের। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণে বাংলা শব্দের ব্যবহার প্রয়োজন। এর ফলে শিশুরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, তাদের মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটবে।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি সজিব রঞ্জন দাস বলেন, দেশের সব সাইনবোর্ড, ব্যানার, নাম্বার প্লেইটে আমাদের বাংলা ভাষাই ব্যবহার করা উচিত। অন্য দেশের ভাষা কেন ব্যবহার করা হবে। ব্যবসায়ীদেরও এক্ষত্রে ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে আমাদের নিজস্ব ভাষার ব্যবহার হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হক বলেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে সব জায়গায় বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, সাইনবোর্ডে বাংলা শব্দ ব্যবহারে আমরা জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সচেতনতা তৈরিরও উদ্যোগ নেব।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এছাড়া সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এ ছাড়া বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭-এর ৩ ধারায়ও সরকারি অফিস, আদালত, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com