বিশেষ প্রতিনিধি ::
ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সুনামগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতি। দীর্ঘদিনের দ্বিধা-বিভক্তি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না শীর্ষ নেতারা। বরং অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দল দিন দিন বাড়ছে। এবার আ.লীগ নেতাদের দ্বন্দ্বে সামিল হয়েছেন কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। তারা এবার প্রকাশ্যেই কর্মসূচি পালন করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে শহরে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি’র কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। তবে এ কর্মসূচিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ ও সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকাংশ নেতাই অনুপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আ.লীগ বর্তমানে দুই বলয়ে বিভক্ত। এক পক্ষে রয়েছেন আ.লীগ সভাপতি মতিউর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট এবং আ.লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল। অপরপক্ষে রয়েছেন জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনসহ বেশ কয়েকজন এমপি।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আ.লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আ.লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সম্মেলনের পর নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন শীঘ্রই দায়িত্বপ্রাপ্তরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। কিন্তু সে আশা এখনো পূরণ হয়নি। দীর্ঘ ১০ মাস কেটে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল-গ্রুপিংকেই দায়ী করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, এক নেতা আরেক নেতাকে আকার-ইঙ্গিতে ‘কটূক্তি’ করছেন। কেউ আবার প্রকাশ্যে নাম উল্লেখ করে আরেক নেতাকে বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে বিরোধ। এক নেতার অনুসারীরা অন্য নেতার অনুসারীদের রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণার পাশাপাশি চলছে কুশপুত্তলিকা দাহ। জ্যেষ্ঠ নেতাদের দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীও। এমন পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন অনেক সাধারণ নেতাকর্মী।
আ.লীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের মধ্যে মতবিরোধ অনেক দিন ধরেই চলছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সেই বিরোধ আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের পক্ষ নেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। অন্যদিকে দলীয় সমর্থনবঞ্চিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরুল হুদা মুকুটের পক্ষে অবস্থান নেন সদর আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান। নির্বাচনে নূরুল হুদা মুকুটের বিজয়ের পর তার পক্ষে নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন মতিউর রহমান। ১৬ জানুয়ারি শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নূরুল হুদা মুকুটকে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করেন।
অন্যদিকে এমএ মান্নান দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেন, আমি ডুংরিয়ার সন্তান ডুংরিয়ায় থাকবো। আমি ভৈরব থেকে রাজনীতি করতে আসেনি। এছাড়া তিনি নাম উল্লেখ না করলেও এক নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন।
এদিকে এমএ মান্নানকে নিয়ে মতিউর রহমানের ‘কটূক্তি’র প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জে হাজারো নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মতিউর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এরই পাল্টা জবাবে গতকাল শুক্রবার জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে কিছু নেতাকর্মী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি’র কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এমন পরিস্থিতিকে ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
জেলা আ.লীগের এক নেতা বলেন, নেতাদের নিজেদের বিরোধ বক্তৃতা থেকে রাজপথে চলে গেছে। সাধারণ নেতা-কর্মীরা বাধ্য হয়ে অথবা লবিং ঠিক রাখতে রাজপথে নামছে। এটা আমাদের রাজনীতির জন্য সুখকর নয়।
আরেক আ.লীগ নেতা বলেন, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কিশোর-তরুণরা কর্মীরা দুই সিনিয়র নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ করছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার, বিব্রতকর। এ রকম রাজনীতি দ্রুত বন্ধ করা উচিত।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।