1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অংশীজনের মতামত শীর্ষক মতবিনিময় : হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

বিশেষ প্রতিনিধি ::
টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা অংশীজনের মতামত-শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’র সভাপতি কাশমির রেজা এবং পিযুষ রঞ্জন পুরকায়স্থের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, পরিবেশ দফতরের পরিচালক মো. জাফর সিদ্দিক, সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. লুৎফুর রহমান, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, আইইউসিএন প্রতিনিধি ওয়াহিদুজ্জামান, ফেরদৌস আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুজজামান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তিত অবস্থায়ই আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হবে। এই পরিবর্তনের ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরেরও পরিবর্তন হচ্ছে। এটা মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। কোন বিধিমালা তৈরি করে হাওর রক্ষা করা যাবে না। স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে নিয়েই তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের দূরে ঠেলে দিলে চলবেনা। তিনি বলেন, হাওরের জেলেরা মাছচোর নয়, হাওরে মাছ ধরা তাদের চিরায়ত উত্তরাধিকার। তিনি টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় সাবেক সাংসদ নজির হোসেন বলেন, আশির দশকে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রচুর গাছের বাগ ছিল। সেই বাগে অনেক বাঘসহ বন্যপ্রাণী ছিল। এখন কিছুই নেই। হাওরের ঐতিহ্যবাহী আলম ডহরে একবার জাল ফেলে ৮০ লক্ষ টাকার মাছ ধরা যেতো। বছরে এ হাওরে ৮ হাজার টন মাছ উৎপাদন হতো, এখন ৮ টনও হয় না। তাই এনজিও পরিচালিত এই ব্যবস্থাপনায় টাঙ্গুয়ার হাওরকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা যাবেনা। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দিলে টাঙ্গুয়াকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তিনি টাঙ্গুয়ার হাওরকে কেন্দ্র করে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার দাবি জানান। নজির হোসেন টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে তার রিচার্সের একটি ফোল্ডার প্রধান অতিথি এমএ মান্নান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জাফর সিদ্দিক ও জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেন।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, কোন এনজিও দিয়ে আমাদের সম্পদ রক্ষা সম্ভব নয়। টাঙ্গুয়ার হাওর কো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যর্থ হয়েছে। তাই আগের ইজারাদার পদ্ধতি দিয়েই এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে। ইজারাদারের হাতে গেলেই হাওরের মাছ গাছ আগের জায়গায় ফিরে আসবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জাফর সিদ্দিক বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের বর্তমান ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এবং আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্যের এই জলাভূমিতে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে পুরোটা সরকারি আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে জনবল। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতিদিনের অবস্থা রেকর্ড করে রাখতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ আগের জায়গায় নেই। হাওর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনার নামে প্রকৃতি বিনাশ করা হয়েছে। এখন মাছের ভান্ডার খ্যাত এই হাওরে আছে কেবল মাছ, গাছ আর পর্যটক। তাই এই হাওরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বিধি তৈরির মাধ্যমে হাওরের পরিবেশ বজায় রেখে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এতে পুরো জেলা উপকৃত হবে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী ফেরদৌস আলম বলেন, ২০০৩ সাল থেকে চলে আসা ‘টাঙ্গুয়ার হাওর কো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ ব্যবস্থাপনায় হাওরের জীব-বৈচিত্র্য বিনাশ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাপনায় সরকারিভাবে হাওরের মানুষকে ‘চোর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এটা তাদের জন্য চরম অপমান। হাওর রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিতরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকারি-বেসরকারিভাবে দালিলিকভাবে হাওরবাসীকে চোর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটা আমাদের জন্য খুব অপমানের।
টাঙ্গুয়ার হাওর কো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর স্থানীয় একটি কমিটির সভাপতি বদরুল বলেন, আমাদেরকে চোর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ এই জল ও জলা আমাদের। আমাদের জলায় মাছ আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যারা আমাদের চোর বলছে আসলে তারাই হাওরকে বিরাণ করেছে। তিনি টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে হাওরবাসীর জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প নেওয়ারও দাবি জানান।
এভাবে মতিবিনিময় সভায় টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের লোকদের আইইউসিএন কর্তৃক চোর আখ্যায়িত করায় প্রতিবাদ করেন সুধীজন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওরটি পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার পর ২০০০ সালে সুন্দরবনের পর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ৬০ বছরের ইজারা প্রথা বিলোপ করে হাওরটি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে সুইস দাতা সংস্থা এসডিসির অর্থায়নে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএন ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে ‘টাঙ্গুয়ার হাওর কো ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নাম দিয়ে জীব-বৈচিত্র পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে। কিন্তু গত ১৩ বছরে প্রকৃতি রক্ষার নামে হাওরের প্রকৃতি বিনাশ হয়েছে বলে জেলাবাসী বিভিন্ন ফোরামে বলে আসছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com