ইদানিং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসানের জরুরতের কথা বুঝতে পারছেন অনেকেই। আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘সচিব সভা’য় বলেছেন, ‘আমলাতন্ত্রিক জটিলতা ছেড়ে সংবেদনশীল ও জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। সরকারি সব সেবা অনলাইনভিত্তিক করতে হবে।’ আমরা প্রধানমন্ত্রীর এবংবিধ ভাবনাকল্পনার বাস্তবায়নকে স্বাগত জানাই ও সমর্থন করি।
আমাদের দেশে আমলাতান্ত্রিকতার গুরুরাণী ভিক্টোরিয়ার ডাকসাইটে আমলা ব্যাবিংটন মেকলে। তিনি তৎকালের ব্রিটিশভারতে ১৯৩৮ সালে ‘মেকলে মিনিট’ নামীয় এক শিক্ষানীতি প্রবর্তন করেন। তার এই শিক্ষানীতির লক্ষ্য ছিল, এই দেশে ইংরেজদের পক্ষ হয়ে ভারত শাসন করার ভারতীয় প্রতিনিধি তৈরি করা, যে-ভারতীয় শরীরে ভারতীয় হয়েও, মনমগজে হবে ইংরেজ এবং ইংরেজদের হয়ে ভারতবাসীদের তাড়িয়ে তাড়িয়ে শাসন করবে, ভারতের সম্পদ ব্রিটিশদেশে পাচার করার ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করে তোলবে, শেষে ভারতীয় সমাজের ভেতরে বিশেষ একটি বশংবদ শ্রেণি হয়ে উঠবে, যারা প্রকৃতপ্রস্তাবে ব্রিটিশদের সাংস্কৃতিক গোলাম। মেকলে এ ব্যাপারে যারপরনাই সফল হয়েছিলেন। এই ‘শরীরে ভরতীয় হয়েও মনমগজে ইংরেজ’রাই ছিল তৎকালে আমলা এবং বর্তমানের কীছু কীছু সরকারি কর্মকর্তাদের চরিত্রে তার ষোলআনা লক্ষণ দৃশ্যমান। তারা কোন জেলাকে দুর্গত ঘোষণা করার আগে, আমলাতান্ত্রিক নিয়মানুসারে, সে-জেলার অর্ধেক লোক দুর্যোগের কারণে মৃত্যুবরণ করার অপেক্ষায় থাকতে প্রস্তুত। ২০১৭ সালে শতভাগ ফসলডুবির কারণে সুনামগঞ্জকে দুর্গত ঘোষণা করার দাবির বিরোধিতা করে এক সচিব বলেছিলেন, নিয়মানুসারে সুনামগঞ্জের অর্ধেক লোক মৃত্যুবরণ করলে তবেই সুনামগঞ্জকে দুর্গত ঘোষণা করার কথা ভাবা যেতে পারে, অন্যথায় নয় এবং দাবিটি নাকি নিতান্তই জনগণের জ্ঞানের অভাব প্রকারান্তরে কীছুই না জানার মতো মূর্খতা।
প্রধানমন্ত্রীর মতোই দেশের মানুষও এবংবিধ আমলাকে ও আমলাতান্ত্রিকতাকে কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে চান না। বিদগ্ধমহলের ধারণা আমলাদের মধ্যে যারা ‘মেকলেচেলা’ হয়ে বসে আছেন, তারা দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের সার্থে নিজেদের আচরণকে বদলে দিতে না পারলে শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল গরিব মেহনতি জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছবে না।