1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

এমন না হলে ধর্ষণ চলতেই থাকবে, শিশুও রেহাই পাবে না

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪

‘পৌরশহরে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ’ এমন একটি শিরোনাম গতকালের (১১ মার্চ ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠে ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদন পাঠ করে ঘটনাটা কারও কাছে খুব একটা টনকনাড়া ধরনের কীছু একটা মনে হবে না। আমরা সমাজে ব্যতিক্রম বাদে সকলেই এমন নির্বোধ না হলেও নির্বিকার হয়ে গেছি। মানসিকতাটা এতোটাই হীন হয়ে গেছে যে, নিজেরা যে পশু হয়ে উঠেছি তাও বুঝতে পারছি না। এই কর্তৃত্বপ্রবণ সমাজ এমন করেই আমাদেরকে তৈরি করে নিয়েছে, আসলে পশু বানিয়ে দিয়েছে, সমাজটাকে আমরা নিজেদের মতো করে তৈরি করতে পারছি না, সভ্যতার নামে আমার আরও অসভ্য হয়ে উঠছি। যে-সমাজ একটি শিশুর নিরাপত্তা দিতে পারে না সে-সমাজ সভ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না কোনও যুক্তিতেই। হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা বা দিনদুপুরে খুনের ঘটনা পাঠ করে যেমন পাঠকেরা নির্বিকার থাকেন তেমনি আমরা নির্বিকার থেকে যাই ধর্ষণের ঘটনা পাঠ করে। জানি ‘পৌরশহরে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ’-এর ঘটনাও এমনই একটি নিতান্ত তুচ্ছ ঘটনার বেশি মর্যাদা পাবে না জনসমাজের কাছে, যে-জনসমাজের গালভরা নাম ‘সুমীল সমাজ’। আইন ও নৈতিকতাবিরোধী সকল অঘটনই আজকাল নিতান্ত স্বাভাবিক কিংবা গতানুগতিক হয়ে গেছে, আমরা যেমন ভাত খাই অথবা জল-চা-সিগারেট সেবন করি, তেমনি স্বাভাবিক ঘটনা।
এই সমাজ এমন হয়ে গেছে, যেখানে মানুষেরা সকল প্রকার অসঙ্গতিকে মেনে নিয়েছে নির্বিকার চিত্তে। ধর্ষণের বিষয়ে এই সমাজের মানসিকতাটা এমনি একটি স্বাভাবিকতা অর্জন করেছে। আইন সেখানে যতই কঠোর হোক না কেন, অপরাধীদের মৃত্যুদ- কিংবা যাবজ্জীবন দিক না কেন, তাতে কীছু যায় আসে না। সাবালিকা কিংবা যুবতী, প্রৌঢ়া এমনকি বৃদ্ধা নারী ধর্ষিত হতেই পারেনÑ এখানে এটাই স্বাভাবিকÑ তো অপ্রাপ্তবয়স্কা শিশু ধর্ষিত হলেই বা কী? সমাজ এই ধর্ষণকে পরোয়া করে না, কারণ সমাজ মূলত পুরুষতান্ত্রিকতার নিয়মে ধর্ষণপ্রবণ। এখানে ধর্ষণের ঘটনায় নারীর বিপরীতে পুরুষের অমর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই কেবল এইসব ধর্ষণজণিত অপকর্ম বন্ধ হতে পারে এবং প্রকারান্তরে পুরুষতান্ত্রিকতার সৃষ্ট ‘ধর্ষণ’ শব্দের অর্থবোধকতাটাই হারিয়ে যাবে। তখন বিষয়টা অনেকটা এমন হবে যে, ধর্ষিত হলে নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে. তাঁর নারীত্বে একটি সাফল্যের পালক যুক্ত হবে। ভুলে গেলে চলবে না পৃথিবীতে এমন দেশ আছে যেখানে, নারীকে বিবাহিত হতে গেলে বিয়ের আগে একাধিক সন্তানের মা হতে হয়। সেখানে সমাজমানসতাটাই এমনÑ কানিন সন্তানের জননীই পুরুষের একমাত্র কাম্য ও পছন্দ। সেখানে কোনও নারীকে বিয়ে করার আগে পুরুষ নিশ্চিত হতে চায়, যে-নারীকে সে বিয়ে করছে সে-নারী তার বীর্য থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কি না। সে-দেশে যে-নারীর বিয়ের আগের সন্তান নেই, তাকে কোনও পুরুষ বিয়ে করে না, দুয়েকটা বাচ্চাসহ কনেই হলো সমাজস্বীকৃত শ্রেষ্ঠ কনে। আমরা এমন সমাজ গড়ে তোলতে চাই না, কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ করতে চাই। সমাজের ধর্ষণপ্রবণতা প্রতিরোধ করার জন্যে সরকার কঠোর আইন করেছেন। কিন্তু উল্লেখিত শিরোনামটি প্রমাণ করছে যে, ধর্ষণ প্রতিরোধে কেবল আইন পর্যাপ্ত নয়, আরও কীছু একটা চাই, কিন্তু সেটা কী? বিদগ্ধমহলের ধারণা সেটা হতে পারে, ধর্ষককে সমাজের পক্ষ থেকে ঘৃণাসহকারে বর্জন করাÑ তার সঙ্গে কোনওরূপ বস্তু বা ভাবের বিনিময় না করা। এমনকি সেটা তার পরিবারের পক্ষ থেকেও। কেউ তার সঙ্গে কথা বলবে না, কোনও দোকান থেকে সে কীছু কিনতে পারবে না, কোন যানে সে চড়তে পারবে না। যদি পরিবার ধর্ষকের সঙ্গে বস্তু ও ভাব বিনিময় বন্ধ না করে তবে সমাজ এই পরিবারের সঙ্গেও বস্তু ও ভাব বিনিময় বন্ধ করবে। এমন না হলে ধর্ষণ চলতেই থাকবে। আসলে সমাজকে বদলাতে হবে, সমাজ সাধারণত শুরুতে বদলায় অর্থনীতি বদলে গেলে এবং সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিকভাবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com